ইরানে একটি আলোচিত চলচ্চিত্র কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরষ্কার জেতার পর, ফ্রান্সের সঙ্গে তেহরানের কূটনৈতিক সম্পর্কে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। চলচ্চিত্রটির বিষয়বস্তু এবং ফরাসি মন্ত্রীর মন্তব্যের জেরে ইরান ফরাসি কূটনীতিককে তলব করেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফ্রান্সের প্রতিনিধির প্রতিবাদের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে যে, ফরাসি মন্ত্রী চলচ্চিত্রটিকে ইরানের সরকারের ‘নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার ‘পাম ডি’অর’ জয়ী এই চলচ্চিত্রটির নাম ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’। চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন ইরানের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা জাফর পানাহি।
ছবিতে কারাবন্দী এক ব্যক্তির গল্প তুলে ধরা হয়েছে, যিনি তার প্রাক্তন নির্যাতনকারীর সন্ধান পান এবং প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হন।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল বারোত পুরস্কারজয়ী চলচ্চিত্রটির প্রশংসা করে বলেন, এটি ইরানের শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের একটি দৃষ্টান্ত। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফ্রান্সের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে ডেকে পাঠায় এবং মন্ত্রীর মন্তব্যকে ‘হস্তক্ষেপমূলক, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও উস্কানিমূলক’ বলে অভিহিত করে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রতি ফ্রান্সের অবস্থানের কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই।
অন্যদিকে, ইরানের চলচ্চিত্র নির্মাতা জাফর পানাহি দীর্ঘদিন ধরেই দেশটির সরকারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত। ২০১৬ সালে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে তার দেশ ত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এমনকি, তিনি কারাবন্দীও ছিলেন। ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’ নির্মাণের ক্ষেত্রেও তিনি সরকারের অনুমোদন নেননি।
পুরস্কার ঘোষণার পর ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা চলচ্চিত্রটিকে ‘মিথ্যা ও অপপ্রচার’-এর মিশ্রণ হিসেবে বর্ণনা করে। তারা আরও অভিযোগ করে যে, পানাহি তার ভাষণে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার কথা উল্লেখ করেননি।
তবে, সংস্কারপন্থী সংবাদ মাধ্যম ও অধিকারকর্মীরা পানাহির এই জয়কে স্বাগত জানিয়েছেন। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নার্গিস মোহাম্মাদি বলেছেন, “এই জয় কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকার রক্ষার প্রতি উৎসর্গীকৃত একটি প্রয়াসের ফল।”
জাফর পানাহি বর্তমানে ইরানে ফিরে এসেছেন। কান চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি বলেছিলেন, “আমি অন্য কোনো দেশে গিয়ে উদ্বাস্তু হিসেবে থাকতে পারব না।
নতুন কোনো সংস্কৃতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার মতো ক্ষমতা আমার নেই।”
তথ্য সূত্র: