ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং তেহরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান আলোচনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে ইরান। দেশটির একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার মতে, ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে আলোচনার আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এবং এটিকে সম্ভবত একটি ‘ফাঁদ’ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ইরানি কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, তেহরান মনে করে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে আলোচনায় নিয়মিত বিরতি এবং সাপ্তাহিক ব্যবধান—যা ইরানের পছন্দ ছিল না—তা একটি রাজনৈতিক ও মিডিয়া কৌশল। ফলে, আলোচনা ব্যর্থ হলে কী হতে পারে, সেই বিষয়ে এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ শুক্রবার সতর্ক করে বলেছিলেন, যদি আসন্ন আলোচনা ফলপ্রসূ না হয়, তাহলে তা বন্ধ করে দিতে হবে এবং ভিন্ন পথে হাঁটতে হবে। তবে, একজন মার্কিন কর্মকর্তা শনিবার সিএনএনকে জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান নিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে আন্তরিক এবং এতে সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ওই মার্কিন কর্মকর্তা আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করতে চায় যে, ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি, ইরানের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক এবং ইরানের জনগণের সম্ভাবনাকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে চায়।”
আসন্ন আলোচনা মূলত উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে উভয় পক্ষ ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের একটি বৃহত্তর কাঠামো নিয়ে আলোচনা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার মতো বিষয়গুলো নিয়ে যারা আলোচনা করেন, সেই কারিগরি দল সম্ভবত এতে অংশ নেবে না।
শনিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি, যিনি রবিবার উইটকফের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা, তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেহরান “পরস্পরবিরোধী বার্তা” পেয়েছে। তিনি বলেন, “বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের মতামত প্রকাশ করছেন।”
ওই ইরানি সূত্র আরও জানায়, “যুক্তরাষ্ট্র কার্যত অর্থপূর্ণ কারিগরি ও রাজনৈতিক আলোচনার জন্য প্রস্তুত নয়।” তিনি আরও যোগ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার সময় “সংক্ষিপ্ত ও সাধারণ উত্তর” দেয়, “প্রধান প্রস্তাবগুলো” উপেক্ষা করে এবং “আলোচনা চলাকালীন সময়ে ক্রমাগত তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে”।
আলোচনা ভেস্তে গেলে নিষেধাজ্ঞা শিথিল এবং অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে ইরান যে আকাঙ্ক্ষা করে, তা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা কম। এমন পরিস্থিতিতে তেহরান এখন পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য খাতে প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে গত এক মাস ধরে।
উইটকফ শুক্রবার ব্রেইটবার্টের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আলোচনার প্রত্যাশা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “ইরানে কখনোই আর সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চলতে দেওয়া হবে না। এটাই আমাদের ‘রেড লাইন’। কোনো সমৃদ্ধকরণ নয়। এর অর্থ হলো—অবকাঠামো ধ্বংস করতে হবে, অস্ত্র তৈরি করা যাবে না এবং নাতানজ, ফোরদো ও ইসফাহানের তিনটি সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ভেঙে ফেলতে হবে।”
অন্যদিকে, ইরান বারবার জোর দিয়ে বলেছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে এবং তারা পারমাণবিক অস্ত্র চায় না। ইরানের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, তাদের ভূখণ্ডে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অনুমতি দেওয়াটা আলোচনার ক্ষেত্রে তাদের ‘চূড়ান্ত সীমা’। যুক্তরাষ্ট্রও বিষয়টি ভালো করেই জানে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন