ইরান-যুক্তরাষ্ট্র: পারমাণবিক আলোচনার শুরুতে উত্তেজনা!

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ওমানে পরমাণু আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যেকার এই আলোচনাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ওমানের রাজধানী মাস্কাটে এই আলোচনার মূল লক্ষ্য হলো ইরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করা।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা চায় ইরান যেন কোনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, তিনি চান ইরান একটি “সুন্দর ও সুখী” দেশ হিসেবে থাকুক, তবে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা চলবে না।

অন্যদিকে, ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা একটি “ন্যায্য ও সম্মানজনক” চুক্তিতে পৌঁছাতে চায়। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আলোচনা ফলপ্রসূ করতে তারা প্রস্তুত।

আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে ওমান। তবে, উভয় দেশই জানিয়েছে, আলোচনা সরাসরি হবে না, বরং পরোক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জানানো হয়েছে, বৈঠকে কোনো ছবি তোলারও সুযোগ থাকছে না।

আলোচনার প্রাক্কালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার একজন উপদেষ্টা বলেছিলেন, তেহরান ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি “বাস্তব ও ন্যায্য” চুক্তির দিকে তাকিয়ে আছে।

ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা আলোচনার টেবিলে গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।

এই আলোচনার প্রেক্ষাপটে, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি (জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন বা জেসিপিওএ) এর কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই চুক্তি অনুযায়ী, ইরানকে তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং পারমাণবিক গবেষণা সীমিত করতে হতো, যার বিনিময়ে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা ছিল।

তবে, ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফাভাবে সরিয়ে নেন এবং ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। দেশটির মুদ্রা দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য দেশও ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। চীন ও রাশিয়া, যারা ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ ছিল, তারা ইরানের ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ প্রয়োগের বিরোধিতা করেছে।

আলোচনার পূর্বে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সামরিক পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। একইসাথে, ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পশ্চিমা দেশগুলো যদি তাদের হুমকি অব্যাহত রাখে, তাহলে তারা পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে আসবে এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আইএইএ-এর পরিদর্শকদের বহিষ্কার করবে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানের পরমাণু কর্মসূচি মোকাবেলার জন্য “লিবিয়ান মডেল” অনুসরণ করার কথা বলেছিলেন, যার অর্থ হলো ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা।

তবে ইরান জানিয়েছে, তারা তাদের পরমাণু কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য তৈরি করেছে এবং এই জ্ঞানকে ধ্বংস করা সম্ভব নয়।

বর্তমানে, ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ও ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) বিভিন্ন সামরিক মহড়া চালাচ্ছে এবং নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে।

এই আলোচনার ফলস্বরূপ, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কী পরিবর্তন আসে, সেদিকে এখন সবার দৃষ্টি।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *