ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা আবারও বাড়ছে। আগামী শনিবার ইতালির রাজধানী রোমে দেশ দুটি তাদের দ্বিতীয় দফা আলোচনায় বসতে যাচ্ছে। তেহরানের দ্রুতগতিতে পরমাণু কর্মসূচি এগিয়ে চলায় এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী এই বিষয়টির দিকে গভীর মনোযোগ রাখছে বিশ্ব।
আলোচনার মূল কারণ হলো ইরানের পরমাণু কর্মসূচি। দেশটির সরকার দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে যে তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে।
বর্তমানে ইরান ইউরেনিয়ামকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করছে, যা অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি। ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী, ইরানকে ৩.৬৭ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি ছিল। এছাড়া, তাদের কাছে ৩০০ কিলোগ্রামের বেশি ইউরেনিয়াম জমা রাখারও অনুমতি ছিল না।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইরানের কাছে ৮,২৯৪.৪ কিলোগ্রাম ইউরেনিয়ামের মজুত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন এবং দেশটির বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনীকে একটি চিঠি লিখেছিলেন, যেখানে আলোচনার মাধ্যমে একটি নতুন চুক্তিতে পৌঁছানোর আশা প্রকাশ করা হয়।
তবে, খামেনী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, কোনো ধরনের আক্রমণের জবাব ইরানও দেবে।
এই প্রেক্ষাপটে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমাদের উদ্বেগের কারণ রয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা মাঝে মাঝেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকি দিয়ে থাকেন।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কারণ হলো, তারা মনে করে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। ইরানের নেতারা বলছেন, তাদের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো পরিকল্পনা নেই, তবে যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল যদি তাদের ওপর হামলা করে, তবে তারা আত্মরক্ষার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে বাধ্য হবে।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক সব সময়ই খারাপ ছিল। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে।
১৯৮০-এর দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের পক্ষে ছিল। এছাড়া, ১৯৮০ সালে তেহরানে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস জবরদখল এবং ৪৪৪ দিন ধরে সেখানে জিম্মি সংকট চলেছিল। এই ঘটনার জেরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়।
বর্তমানে, দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য আলোচনার চেষ্টা চলছে। তবে, এখনো পর্যন্ত কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা