ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ওমানে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার তৃতীয় দফা শুরু হয়েছে। শনিবার মাস্কাটে অনুষ্ঠিত হওয়া এই বৈঠকে ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম সীমিত করার বিষয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ (Uranium enrichment) নিয়ে।
উভয় দেশই কয়েক দশক ধরে বিদ্যমান অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার বিনিময়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে চাইছে।
বৈঠকের বিষয়ে ইরানের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। তবে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে, আলোচনা চলছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য আসেনি।
আলোচনা শুরুর আগে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) এক বক্তব্যে কিছুটা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেছিলেন, “ইরান পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে। আমরা তাদের সঙ্গে অনেক কথা বলেছি এবং আমি মনে করি একটি চুক্তি হতে পারে।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “আমি অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে একটি চুক্তি করতে চাই। এটি মানবতার জন্য ভালো হবে।”
তবে আলোচনার ফলপ্রসূতা নিয়ে তিনি সতর্কও ছিলেন। প্রয়োজনে সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনাও তিনি উড়িয়ে দেননি।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই আলোচনার এজেন্ডায় দেশটির প্রতিরক্ষা ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এর আগে, ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা আলোচনাকে উভয় পক্ষই ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করেছিল।
২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিলে উত্তেজনা বাড়ে।
এরপর থেকে ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিতে সকল সীমা লঙ্ঘন করে। তারা বর্তমানে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। যদিও তেহরান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং তাদের কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিও (Marco Rubio) বলেছেন, একটি চুক্তির অংশ হিসেবে ইরানকে অবশ্যই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে।
দেশটির বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (Bushehr atomic energy plant) জন্য প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম আমদানি করতে হবে।
তবে তেহরান স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধ করা বা তাদের মজুতকৃত ইউরেনিয়াম ছেড়ে দেওয়া তাদের জন্য ‘অতিক্রমযোগ্য’ একটি বিষয়।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই আলোচনায় উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে, যা বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা