ইরানের পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসার সম্ভাবনা, পশ্চিমাদের প্রতি তেহরানের হুঁশিয়ারি।
জাতিসংঘ: ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম গারিবাবাদি বুধবার সতর্ক করে বলেছেন যে, ইউরোপীয় দেশগুলো যদি দেশটির উপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাহলে তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্ত(NPT) থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। খবর সূত্রে জানা গেছে, আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার বিষয়ে কোনো সমাধানে পৌঁছানো না গেলে এই নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহাল করা হতে পারে।
সম্প্রতি জাতিসংঘের এক সংবাদ সম্মেলনে গারিবাবাদি বলেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে আসন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আগে ইরানের পক্ষ থেকে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হলো। ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ার পর এই দেশগুলো এখনো চুক্তিতে টিকে আছে। ধারণা করা হচ্ছে, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ইরান ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
ইউরোপীয় দেশগুলো প্রস্তাব দিয়েছে যে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না হলে তারা চুক্তির ‘স্ন্যাপব্যাক’ ধারা কার্যকর করতে পারে। এই ধারার অধীনে, ইরানের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। ২০১৫ সালের চুক্তিতে ইরানের উপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছিল, যার বিনিময়ে দেশটি তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে রাজি হয়েছিল। ইরান বরাবরই বলে এসেছে যে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
গারিবাবাদি আরও জানান, ইরানের অভ্যন্তরে পুরোনো পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চাপ রয়েছে। বিশেষ করে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলার পরে এই চাপ আরও বেড়েছে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, যদি নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহাল করা হয়, তাহলে ইরান এই বিষয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে।
উল্লেখ্য, উত্তর কোরিয়া ২০০৩ সালে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরান হবে দ্বিতীয় দেশ, যারা এই চুক্তি থেকে বের হবে। তবে উত্তর কোরিয়ার এই সিদ্ধান্তকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো পর্যন্ত স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের সঙ্গে দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। যদিও গত জুনে ইসরায়েলের হামলার কারণে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা কয়েক দফা পিছিয়ে যায়। গারিবাবাদি বলেন, তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা পুনরায় শুরু করতে প্রস্তুত। তবে তিনি আলোচনার টেবিলে আসার আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি একটি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, কূটনীতির আড়ালে যেন ইরানের উপর কোনো সামরিক হামলা চালানো না হয়।
গারিবাবাদি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের উপর পুনরায় আস্থা রাখা যাবে কিনা, সেটি এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তাদের ইরানের আস্থা অর্জন করতে হবে এবং আলোচনার টেবিলে সততার পরিচয় দিতে হবে।”
ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে গারিবাবাদি এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি আশা প্রকাশ করেছেন যে, আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার মতো পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হবে। গারিবাবাদি মনে করেন, শুক্রবারের বৈঠকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর সাফল্য নির্ভর করবে ইউরোপীয় দেশগুলো ইরানের সঙ্গে কেমন আচরণ করে তার উপর।
গারিবাবাদি বলেন, “আমরা সবসময় ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের বৈঠকের গুরুত্ব দিয়েছি। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইউরোপীয় দেশগুলোর নীতি অবশ্যই স্বাধীন হতে হবে। তাদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করা উচিত নয়। যদি তাই হয়, তবে আমরা কেন ইউরোপীয়দের সঙ্গে আলোচনা করব, যখন আমরা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেই আলোচনা করতে পারি?”
ইরানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা নিষেধাজ্ঞা প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব বিবেচনা করতে প্রস্তুত এবং পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়া থেকে আটকাতে চান।
এছাড়াও, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর পরিদর্শকদের একটি দল কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইরানে আসবে বলে জানা গেছে। ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের পর এই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক পরিদর্শক দলকে ইরানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তবে পরিদর্শকদের পারমাণবিক স্থাপনা পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়া হবে না। গারিবাবাদি আরও জানান, সংস্থাটির নেতাদের সঙ্গে তাদের আলোচনা হবে, যেখানে ইরানের পক্ষ থেকে আইএইএ-কে প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে কিনা, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস