ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের প্রেক্ষিতে তেহরানের সম্ভাব্য পদক্ষেপ এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। দেশটির সংসদ সদস্যরা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে (Non-Proliferation Treaty – NPT) অংশগ্রহণ রাখা নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করছেন।
এমন পরিস্থিতিতে ইরানের অর্থনীতিতে আরও চাপ সৃষ্টি হয়েছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে।
সংবাদ সংস্থা এপি’র খবর অনুযায়ী, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হওয়ার পর তেহরান এর প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করছে।
ইরানের একজন সংসদ সদস্য, ইসমাইল কাওসারি, দেশটির পার্লামেন্টের সম্ভাব্য পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, তারা এনপিটি থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন।
এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের বৈদেশিক সম্পদ জব্দ হবে, দেশটির সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি বাতিল হবে এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কার্যক্রমও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এই নিষেধাজ্ঞাগুলো মূলত ‘স্ন্যাপব্যাক’ নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসেছে।
২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিতে এই ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এর ফলে ইরানের অর্থনীতি আরও কঠিন পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।
দেশটির মুদ্রা, রিয়ালের দাম রেকর্ড পরিমাণে কমে যাওয়ায় খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ছে।
মাংস, চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এমন পরিস্থিতিতে ইরান-ইসরায়েল এবং সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের মধ্যে নতুন করে সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে।
জুন মাসে দুই পক্ষের মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধ হয়, যেখানে ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
সেই কেন্দ্রগুলো আবার মেরামতের কাজ চলছে।
ইরানের পার্লামেন্ট স্পিকার মোহাম্মদ বাখের কালিবাফ জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাগুলি সমর্থন করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “যদি কোনো দেশ এই অবৈধ প্রস্তাবের ভিত্তিতে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চায়, তাহলে ইরানও এর সমুচিত জবাব দেবে।
এই অবৈধ পদক্ষেপের মূল হোতা তিনটি ইউরোপীয় দেশকেও এর ফল ভোগ করতে হবে।”
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, “আলোচনার পথ এখনো খোলা আছে।”
তবে, তেহরান এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস আরাকচি বলেছেন, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের কিছু ক্ষতি হবে, তবে পশ্চিমা গণমাধ্যম এটিকে অতিরঞ্জিত করে দেখাচ্ছে।
তিনি একে ইরানের জনগণকে ভয় দেখানোর একটি কৌশল হিসেবেও অভিহিত করেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এই পারমাণবিক কর্মসূচি এবং জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য, কারণ বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের উপরও এর প্রভাব পড়তে পারে।
ইরানের এই সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম প্রভাবিত হতে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও সরাসরি প্রভাবিত করবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস