জেফার পানাহি: কারাগারের স্মৃতি, মুক্তি পরেও দেশে ফেরার আকুলতা!

ইরানের নিষিদ্ধ চলচ্চিত্র নির্মাতা জাফার পানাহি: নিপীড়নের অন্ধকারে শিল্পের আলো

ইরানের চলচ্চিত্র জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম জাফার পানাহি। যিনি সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে চলেছেন।

তাঁর কাজগুলি ইরানে সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে তুলে ধরে, যা প্রায়শই দেশটির কর্তৃপক্ষের বিরাগভাজন হয়। সম্প্রতি তিনি কান চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁর নতুন ছবি নিয়ে হাজির হয়েছেন, যেখানে তিনি তাঁর কারাবাসের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরেছেন।

জাফার পানাহি দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের সরকারের রোষানলে রয়েছেন। তাঁর চলচ্চিত্রগুলি প্রায়ই “রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা” হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, যার ফলস্বরূপ তাঁকে একাধিকবার কারারুদ্ধ করা হয়েছে এবং ছবি বানানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

এমনকি, তাঁর বাড়ি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন, যাতে তিনি জামিন পেতে পারেন। কিন্তু কোনো বাধা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি গোপনে ছবি তৈরি করেছেন, যা তাঁর শিল্পচর্চার প্রতিচ্ছবি।

তাঁর নতুন ছবি, “ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাকসিডেন্ট”, কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে। এই ছবিতে একজন প্রাক্তন রাজনৈতিক বন্দীর গল্প বলা হয়েছে, যে তার এক সময়ের নির্যাতনকারীর সন্ধান করে।

পানাহি এই ছবিটির মাধ্যমে বন্দী জীবন এবং প্রতিশোধের জটিল মনস্তত্ত্বকে ফুটিয়ে তুলেছেন।

আমি নিষেধাজ্ঞার পরেও চলচ্চিত্র নির্মাতা হয়েছি।

জাফার পানাহি

তাঁর মতে, ইরানে বসবাস করা মানেই হলো একটি “বদ্ধ” পরিবেশে বাস করা, যেখানে মানুষের জীবন নানা বিধিনিষেধের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এমন পরিস্থিতিতেও তিনি শিল্পের আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রায় সাত মাস কারাবাসের পর তিনি মুক্তি পান। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি প্রায়ই পুরনো কারাগারের সামনে গিয়ে বন্দীদের কথা ভাবতেন।

ওরা আমার মানুষ ছিল। আমি তাদের ছেড়ে কীভাবে চলে আসি?

জাফার পানাহি

পানাহির চলচ্চিত্রগুলো কেবল বিনোদনমূলক নয়, বরং সমাজের প্রতিচ্ছবি। তাঁর ছবিতে ইরানের সাধারণ মানুষের জীবন, তাঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়।

তিনি মনে করেন, একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার কাজ হলো সমাজের কথা বলা, যা তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে করে যাচ্ছেন।

জাফার পানাহির এই সংগ্রাম শুধু তাঁর একার নয়, বরং ইরানের মুক্তচিন্তা এবং শিল্পের স্বাধীনতার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। তাঁর কাজ বিশ্বজুড়ে শিল্পী ও মানবাধিকার কর্মীদের কাছে অনুপ্রেরণা যোগায়।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *