আলাবামায় অধ্যয়নরত ইরানি ছাত্রের আকস্মিক দেশত্যাগের ঘোষণা, কারণ অজানা!

যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা অঙ্গরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরানি ছাত্র, আলিরেজা দরৌদি, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষের হাতে আটকের পর নিজের দেশ ইরানে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও তার বিরুদ্ধে আনা প্রাথমিক অভিযোগটি সরকার পরে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।

দরৌদিকে ছয় সপ্তাহ ধরে লুইজিয়ানার একটি ডিটেনশন সেন্টারে আটকে রাখা হয়েছিল।

আলাবামার এই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রকে মার্চ মাসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির কঠোরতার অংশ হিসেবে আটক করা হয়। এরপর তাকে আলাবামাতে তার বাগদত্তা সামা ইব্রাহিমির সঙ্গে থাকার পরিবর্তে, ৩২০ মাইলেরও বেশি দূরের লুইজিয়ানার জেনা শহরের একটি ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়।

তখন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছিল, দরৌদি “জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি” স্বরূপ। তবে দরৌদির আইনজীবী ডেভিড রোজাস জানান, সরকার তাদের এই দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পেশ করতে পারেনি।

২০২৩ সালের জুনে দরৌদির ভিসা বাতিল করা হয়। কর্তৃপক্ষ এর কারণ জানায়নি এবং সে বছর তার পক্ষ থেকে বহুবার জানতে চাইলেও কোনো উত্তর দেয়নি।

তার বাগদত্তা সামা ইব্রাহিমির ভাষ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুরুতে জানিয়েছিল যে দরৌদি যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অধিকার রাখেন, কিন্তু তিনি যদি দেশ ত্যাগ করেন, তাহলে পুনরায় ফিরতে পারবেন না।

এই বছরের শুরুতে, সরকার দরৌদিকে deport করার জন্য দুটি অভিযোগ আনে। রোজাস জানান, অভিযোগগুলোতে বলা হয়, দরৌদির ভিসা বাতিল করা হয়েছে এবং তিনি ছাত্র হিসেবে ‘নিয়ম মেনে চলেননি’।

বৃহস্পতিবার, মার্কিন সরকারের একজন আইনজীবী প্রথম অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নেন এবং জানান, ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্তটি ছিল ‘prudential’, অর্থাৎ তিনি দেশ ত্যাগ করার পরেই এটি কার্যকর হবে।

রোজাস আরও জানান, তিনি দ্বিতীয় অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রমাণ জমা দিয়েছেন, যেখানে বলা হয়েছে যে দরৌদি সক্রিয় ছাত্র নন।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আদালতের বিচারক মাইথে গঞ্জালেজ উভয় পক্ষকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত আপিল করার সময় দেন এবং দরৌদির জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন। এরপর দরৌদি, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা এড়িয়ে, দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।

ফোনে আলাপকালে সামা ইব্রাহিমি জানান, “আলিরেজা আমাকে বলেছিলেন, যদি তাকে মুক্তি দেওয়া হতো, তাহলে তিনি অন্যান্য ছাত্রদের এবং নিজের জন্য মামলার লড়াই চালিয়ে যেতেন। তারা (কর্তৃপক্ষ) তাকে ক্লান্ত করে deport করতে চাইছে।”

এক ঘণ্টার শুনানিতে অংশ নিতে ১১ ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে আসা সামা, দরৌদিকে deport করার কারণ নিয়ে আইনজীবী রোজাসের মতোই দ্বিধা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দরৌদির কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই, তিনি বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন এবং অন্যান্য ছাত্রদের মতো রাজনৈতিকভাবেও সক্রিয় ছিলেন না।

সামা তার বাগদত্তাকে একজন “নিরীহ” এবং “গভীর চিন্তাভাবনাকারী” হিসেবে বর্ণনা করেন, যিনি দিনের বেশিরভাগ সময় ল্যাবরেটরিতে কাটান এবং এনিমে ভালোবাসেন।

তিনি বলেন, আলিরেজার সঙ্গে যা হয়েছে, তার কোনো যোগ্য ছিলেন না তিনি এবং তাদের আলাবামার জীবন এখন শেষ হয়ে গেছে।

সামা আরও বলেন, “আমাদের সঙ্গে যা ঘটেছে, তাতে আমি খুশি নই। আমার পিছনে ফেলে আসা সবকিছু, আমাদের স্বপ্ন, বন্ধুত্ব, এবং একসঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলোর জন্য শোক করার জন্য আমার সময় দরকার।”

এপ্রিল মাসে কারাগার থেকে সামাকে লেখা এক চিঠিতে দরৌদি তার আটককে “সম্পূর্ণ অবিচার” বলে উল্লেখ করেন। তিনি লিখেছিলেন, “আমি এই দেশে কোনো সমস্যা তৈরি করিনি। আমি অবৈধভাবে প্রবেশ করিনি। আমি সব আইনি পথ অনুসরণ করেছি।”

আইনজীবী রোজাস তার ২১ বছরের অভিবাসন বিষয়ক কর্মজীবনে এমন ঘটনা দেখেননি বলে জানান। তিনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তার মক্কেলকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত করা এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক অথবা স্বেচ্ছায় দেশত্যাগের মধ্যে একটি বেছে নিতে বাধ্য করার অভিযোগ করেন।

রোজাস বলেন, “আমি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। আমার মনে হয়, এটি ন্যায়বিচারের পরিহাস।”

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *