ইরানের মুদ্রা রিয়ালের দ্রুত দরপতন, পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় তেহরান।
তেহরান: ইরানের মুদ্রা রিয়ালের বিনিময় হার প্রায় রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইউরোপীয় দেশগুলো ইরানের পরমাণু কর্মসূচির কারণে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করতে যাচ্ছে।
এর ফলে দেশটির দুর্বল অর্থনীতি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বৃহস্পতিবার (গতকাল) স্থানীয় বাজারে প্রতি ডলারের বিপরীতে ১০ লাখের বেশি রিয়াল বিনিময় হয়েছে।
২০১৫ সালে বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর থেকে রিয়ালের মান উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ওই সময় প্রতি ডলারের বিপরীতে ৩২ হাজার রিয়াল পাওয়া যেত।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে রিয়ালের দর সর্বকালের সর্বনিম্ন ১,০৪৩,০০০-এ নেমে আসে।
ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্য গত ৮ আগস্ট সতর্ক করে জানায়, ইরান যদি আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর পরিদর্শনের অনুমতি দিতে অস্বীকার করে, তবে তারা নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের প্রক্রিয়া শুরু করবে।
গত জুনে ইসরায়েলি হামলার পর ইরানের পক্ষ থেকে এই পরিদর্শন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইসরায়েলি হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতারা নিহত হন এবং দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে আত্মগোপনে যেতে হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অর্থনীতি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে এবং এর ফলস্বরূপ জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে।
এর প্রতিক্রিয়ায় ইরানের কর্মকর্তারা পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সীমিত কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছেন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি সম্প্রতি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সব সময় যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয় না।
এই পরিস্থিতিতে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল ইরান।
২০১৫ সালের চুক্তিতে ইরান আইএইএ-কে তাদের পরমাণু কর্মসূচি আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের অনুমতি দিতে রাজি হয়েছিল।
এর মধ্যে ছিল পরমাণু স্থাপনায় ক্যামেরা ও সেন্সর স্থাপন করা এবং নিয়মিত পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে চুক্তি থেকে একতরফাভাবে সরে আসার পর থেকে আইএইএ পরিদর্শকদের কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে।
ইউরোপীয় দেশগুলো ইরানের সঙ্গে তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানে রাজি হওয়ার জন্য আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে।
যদিও অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। তবে এর আগেই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, সেক্ষেত্রে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চীন ও রাশিয়া ভেটো দিতে পারে। অতীতে তারা ইরানের প্রতি সমর্থন জুগিয়েছে।
তবে জুন মাসের যুদ্ধে তারা কোনো পক্ষ নেয়নি। ইরানের অপরিশোধিত তেলের প্রধান ক্রেতা হিসেবে চীনের উপরও এর প্রভাব পড়তে পারে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়া জাতিসংঘের প্রস্তাবের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। অক্টোবরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে রাশিয়ার।
এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় দেশগুলোর উপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি হতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে ১ মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্য ১১০ টাকার বেশি।
ইরানের রিয়ালের এই দরপতন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ ইরান থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করা হয়।
নিষেধাজ্ঞা এবং মুদ্রার দর পতনের কারণে আমদানি ব্যয় বাড়তে পারে, যা বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস