আইরিশ উপকূলের একটি শহর, আর্কলো, সেখানকার দূষিত জলের সমস্যা সমাধানে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে তারা একটি নতুন বর্জ্য জল পরিশোধন কেন্দ্র তৈরি করেছে, যা শুধু পরিবেশের উন্নতিই ঘটায়নি, বরং শহরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে এবং বাসিন্দাদের জন্য গর্বের কারণ হয়েছে।
আর্কলো, যা আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনের দক্ষিণে প্রায় ৪০ মাইল দূরে অবস্থিত, দীর্ঘদিন ধরে তাদের বর্জ্য জল সরাসরি অ্যাভোকা নদীতে ফেলত, যা পরে সমুদ্রে গিয়ে মিশতো। এর ফলে সমুদ্রের জল দূষিত হতো, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত সমস্যা তৈরি করত।
এই সমস্যার সমাধানে দীর্ঘ ৩০ বছর পর, তারা একটি অত্যাধুনিক বর্জ্য জল পরিশোধন কেন্দ্র স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।
এই প্রকল্পের মূল ধারণাটি এসেছিল ক্ল্যান্সি মুর নামক একটি স্থাপত্য সংস্থা থেকে। তারা শুধুমাত্র একটি কার্যকরী কাঠামো তৈরি করার পরিবর্তে, এমন একটি নকশা তৈরি করতে চেয়েছিল যা শহরের নান্দনিকতাকে বৃদ্ধি করবে।
এই কেন্দ্রে ব্যবহৃত হয়েছে বিশেষ ধরনের স্থাপত্যশৈলী এবং সমুদ্রের কাছাকাছি এলাকার রঙের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নীল-সবুজ রঙ ব্যবহার করা হয়েছে। এটি দেখতে অনেকটা সমুদ্র এবং আকাশের মিলিত রূপের মতো।
পরিশোধন কেন্দ্রটি তৈরি করতে আয়ারল্যান্ডের পানি কর্তৃপক্ষ (Uisce Éireann) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখানে বর্জ্য জল পরিশোধনের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
পরিশোধিত জল একটি দীর্ঘ পাইপলাইনের মাধ্যমে সমুদ্রে ফেলা হয়, যা পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব কমায়। এই প্রকল্পের ফলে আর্কলো শহরের জনসংখ্যা তিনগুণ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পরিশোধন কেন্দ্রটি শুধু প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের উদাহরণ নয়, এটি একটি সুন্দর স্থাপত্যকর্মও বটে। এর নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যা প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মিশে যায়।
এছাড়া, এখানে একটি মাল্টিলেভেল ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে পাইপ, সিলিন্ডার এবং অন্যান্য সরঞ্জামগুলি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যা দর্শকদের আকর্ষণ করে।
আর্কলোর এই নতুন প্রকল্প, শুধু একটি বর্জ্য জল পরিশোধন কেন্দ্র নয়, এটি একটি শহরের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের প্রতীক। এই ধরনের প্রকল্প বাংলাদেশের শহরগুলোতেও দূষণ সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
আমাদের দেশেও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র: The Guardian