দ্বীপ অফ ওয়াইট: সাহিত্য, সঙ্গীত আর প্রকৃতির এক অনবদ্য ভ্রমণ
যুক্তরাজ্যের একটি দ্বীপ, যার নাম ‘দ্বীপ অফ ওয়াইট’। এখানকার শান্ত পরিবেশ, ঐতিহাসিক স্থান আর সবুজ প্রকৃতির মাঝে ছুটি কাটানোর এক দারুণ সুযোগ রয়েছে। আধুনিক জীবনের কোলাহল থেকে দূরে, এই দ্বীপে আপনি প্রকৃতির কাছাকাছি আসতে পারবেন খুব সহজে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, এখানে গাড়ি ছাড়াই ভ্রমণ করা সম্ভব। ট্রেনে করে এসে ফেরিতে চেপে এই দ্বীপে পৌঁছানো যায়, আর এখানকার লোকাল বাসের নেটওয়ার্কও বেশ ভালো।
এই দ্বীপটি কবি আলফ্রেড লর্ড টেনিসন, লেখিকা ভার্জিনিয়া উলফ এবং কিংবদন্তী সঙ্গীত শিল্পী জিমি হেন্ডরিক্সের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের স্মৃতি বিজড়িত। টেনিসন এই দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মুগ্ধ ছিলেন।
তিনি এখানকার বাতাসকে মূল্যবান বলেছিলেন।
লিম্বিংটন পিয়ারে ট্রেন থেকে নেমে, ৪০ মিনিটের একটি ফেরি যাত্রা আপনাকে ইয়ামাউথে নিয়ে যাবে। এরপর শুরু হবে আপনার আসল ভ্রমণ।
গ্রীষ্মকালে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ‘সামার লিঙ্কস’ বাস পরিষেবা চালু থাকে, যা আপনাকে দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেবে। এখানকার ‘ট্যাপনেল ফার্ম’-এ থাকার চমৎকার ব্যবস্থা রয়েছে।
সেখানে আধুনিক সব সুবিধা সম্পন্ন কটেজগুলোতে থেকে আপনি টেনিসন ডাউনের দিকে তাকাতে পারবেন।
টেনিসন ট্রেইল ধরে হেঁটে গেলে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। ১৪ মাইল দীর্ঘ এই ট্রেইলটি ওয়েস্ট ওয়াইটের কেন্দ্র দিয়ে গেছে।
এখানে রয়েছে সবুজ পাহাড়, যেখানে একদিকে সমুদ্রের দৃশ্য, অন্যদিকে সাদা পাথরের পাহাড় আর পূর্ব দিকে শান্ত উপকূল। ভাগ্য ভালো থাকলে নীল প্রজাপতি আর অর্কিডের মতো সুন্দর ফুলও দেখতে পাবেন।
ফ্রেশওয়াটার বে-তে রয়েছে সাদা পাথরের স্তম্ভ, যা সমুদ্রের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। আপনার প্রথম দিনের ভ্রমণে এখানকার স্বচ্ছ পানিতে সাঁতার কাটতে পারেন।
এই জায়গাটি ১৯৭০ সালের আইল অফ ওয়াইট উৎসবের স্থান হিসেবেও পরিচিত। যেখানে জিমি হেন্ডরিক্স-এর কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
টেনিসনের পুরনো বাড়ির কাছেই রয়েছে ডিম্বোলা গ্যালারি। এখানে ভিক্টোরিয়ান যুগের বিখ্যাত ফটোগ্রাফার জুলিয়া মার্গারেট ক্যামেরনের ছবিসহ বিভিন্ন আলোকচিত্র প্রদর্শিত হয়।
এই গ্যালারিতে ভার্জিনিয়া উলফের লেখা একটি নাটকের স্মৃতিচিহ্নও রয়েছে। উলফের এই নাটকে টেনিসন, ক্যামেরন পরিবার এবং অভিনেত্রী এলেন টেরির চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
টেনিসনের বাড়ি ‘ফারিংফোর্ড’-এর বাগানও ঘুরে আসা যেতে পারে। এখানকার চার্চের পাশে একটি কাঠের পথ ধরে হেঁটে গেলে, আপনি টেনিসনের সময়ে তৈরি করা একটি ফুটব্রিজ দেখতে পাবেন।
এরপর ‘নিডল্স ব্রিজার’ বাসে করে পাহাড়ের উপরে ওঠা যেতে পারে, যেখান থেকে সাদা ও লাল রঙের বাতিঘর দেখা যায়। আলুম বে-র রঙিন পাথরের দৃশ্যও এই ভ্রমণকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
পরের দিনগুলোতে আপনি এখানকার বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখতে পারেন। এখানকার কারিসব্রুক ক্যাসেল এক সময় দ্বিতীয় চার্লস-কে বন্দী করে রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।
এছাড়া, মটিস্টোন গার্ডেন-এর ফুলের বাগানও আপনার মন জয় করবে।
এখানে রাতে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে, যেমন- ট্যাপনেল ফার্মের কটেজ বা গ্ল্যাম্পিং-এর মতো আকর্ষণীয় বিকল্পগুলো বেছে নিতে পারেন। এখানে পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে থাকারও সুযোগ আছে।
দ্বীপ অফ ওয়াইটের এই ভ্রমণ সত্যিই অসাধারণ। তাই, প্রকৃতির কাছাকাছি, ইতিহাস আর সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে, একটি সুন্দর ভ্রমণের জন্য এই দ্বীপ আপনার পছন্দের তালিকায় যোগ করতে পারেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান