গাজায় খাদ্য পাঠাতে রাজি ইসরায়েল! যুদ্ধের ভয়াবহতা বাড়ছে?

গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান তীব্র হওয়ার মধ্যেই সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য সীমিত খাদ্য সরবরাহ করতে রাজি হয়েছে দেশটি। সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, মিত্র দেশগুলোর চাপের কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রোববার রাতে তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়, সেনাবাহিনীর সুপারিশের ভিত্তিতে গাজায় কিছু খাদ্য প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী যখন গাজায় ব্যাপক স্থল অভিযান শুরু করেছে, ঠিক তখনই এই ঘোষণা আসে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই অভিযানে ১৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, “গাজায় যাতে খাদ্য সংকট তৈরি না হয়, সেজন্য সেখানকার জনগণের জন্য একটি ন্যূনতম খাদ্য সরবরাহ করতে দেবে ইসরায়েল।”

গাজায় দীর্ঘ দুই মাস ধরে অবরোধের কারণে সেখানে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে, যা দুর্ভিক্ষের কারণ হতে পারে। আন্তর্জাতিক মহল থেকে ইসরায়েলের ওপর অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ বাড়ছে।

সোমবার এক ভিডিও ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, মিত্র দেশগুলো “ক্ষুধা-সংক্রান্ত ছবি” নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তিনি নির্দিষ্ট কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে বলেন, বিশ্বের “সবচেয়ে ভালো বন্ধু” রাষ্ট্রগুলো জানিয়েছে, “আমরা ক্ষুধার ছবি, গণ-ক্ষুধার দৃশ্য সহ্য করতে পারি না। আমরা তোমাদের সমর্থন করতে পারব না।”

নেতানিয়াহু আরও বলেন, “সুতরাং, বিজয় অর্জনের জন্য, আমাদের কোনো না কোনোভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।” তিনি জানান, গাজায় যে সহায়তা পাঠানো হবে, তা হবে “নগণ্য”।

কবে থেকে সরবরাহ শুরু হবে, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

জাতিসংঘের সহায়তা বিষয়ক প্রধানের মুখপাত্র টম ফ্লেচার নিশ্চিত করেছেন যে, ইসরায়েল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে “সীমিত সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব” পাওয়া গেছে এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে কিভাবে এটি করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা চলছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুরশ আল-জাজিরা আরবিকে জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে সীমান্ত খোলার সময় সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি।

নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থী মিত্ররা গাজায় কোনো ধরনের সহায়তা দেওয়ার বিরোধীতা করছেন। তাদের মতে, সামরিক শক্তি এবং ক্ষুধার মাধ্যমেই হামাসের বিরুদ্ধে জয় নিশ্চিত করা যাবে।

জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এই সিদ্ধান্তকে “মারাত্মক ভুল” হিসেবে অভিহিত করেছেন। বেন-গভিরের দল থেকে হেরিটেজ মন্ত্রী আমিচাই এলিয়াহু এই পরিকল্পনাকে “ট্র্যাজেডি” হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, এটি গাজায় “বিজয় অর্জনের জন্য যুদ্ধের প্রচেষ্টাকে” সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে খাদ্যাভাবকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার এবং গাজাকে জাতিগতভাবে নির্মূল করার চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে, অবরোধ এবং তীব্র সামরিক অভিযানের মধ্যেও কাতার থেকে রয়টার্সকে উভয়পক্ষের সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে নতুন দফা আলোচনা এখনো কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি।

নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, আলোচনায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দীদের মুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেইসাথে হামাসকে নির্বাসনে পাঠানো এবং গাজাকে demilitarise করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে হামাস ইতোমধ্যেই এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী পরে এক বিবৃতিতে জানায়, দোহায় একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সুবিধার্থে তারা অভিযান সীমিত করতে পারে।

তবে নেতানিয়াহু তার ভিডিও ভাষণে জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলি বাহিনীর লক্ষ্য হলো গাজার “সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া”।

তিনি বলেন, “যুদ্ধ তীব্র হচ্ছে এবং আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা উপত্যকার সব এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেব। আমরা হাল ছাড়ব না। কিন্তু সফল হতে হলে, আমাদের এমনভাবে কাজ করতে হবে যা থামানো যাবে না।”

গত এক সপ্তাহে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় হামাসের ৬৭০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। তারা জানিয়েছে, এতে বহু হামাস যোদ্ধা নিহত হয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত রোববার পর্যন্ত এক সপ্তাহে অন্তত ৪৬৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি।

সোমবার সকালে আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ভোর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ২৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে জাবালিয়ার আল-ফালুজা বাজারের কাছে ৫ জন এবং খান ইউনিসে ৬ জন নিহত হয়েছে।

এছাড়াও, নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের আশেপাশে ইসরায়েলি হামলার খবর পাওয়া গেছে। ইন্দোনেশীয় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রেও হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে ৪ জন চিকিৎসক ও ৮ জন নার্সসহ কমপক্ষে ৫৫ জন আটকা পড়েছেন।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *