ফিলিস্তিন: ইসরায়েলের নতুন সিদ্ধান্তে কি ধ্বংস হবে রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন?

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের বিতর্কিত বসতি স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন, দ্বিধাবিভক্ত হতে পারে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড।

ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে একটি নতুন বসতি স্থাপন প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে, যা কার্যত এই ভূখণ্ডটিকে দু’ভাগে বিভক্ত করে ফেলবে। ফিলিস্তিনি এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এর ফলে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

জেরুজালেমের পূর্বে অবস্থিত একটি উন্মুক্ত ভূমি, যা ‘ই-১’ নামে পরিচিত, সেখানে বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা কয়েক দশক ধরে বিবেচনা করা হচ্ছিল। তবে অতীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে এটি স্থগিত ছিল।

সম্প্রতি, ৬ই আগস্টে প্রকল্পের বিরুদ্ধে আনা সব আবেদন খারিজ হওয়ার পর পরিকল্পনা ও নির্মাণ কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।

যদি সবকিছু দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হয়, তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হতে পারে এবং এক বছরের মধ্যে বাড়ি তৈরির কাজও শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৩,৫০০ অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যার মাধ্যমে মালে আদুমিম বসতি সম্প্রসারণ করা হবে। গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের চরম ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ এই তথ্য জানান।

স্মোটরিচ এই অনুমোদনকে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি একটি জবাব হিসেবে তুলে ধরেছেন, যারা সম্প্রতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এই বাস্তবতার ফলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণাটি কার্যত বিলীন হয়ে যাবে, কারণ সেখানে স্বীকৃতি দেওয়ার মতো কিছু নেই এবং কাউকে স্বীকৃতি দেওয়ারও কেউ নেই।

বিশ্বে যারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করবে, আমরা তাদের মাঠ পর্যায়ে জবাব দেব।”

ই-১ এর অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি হলো রামাল্লাহ এবং বেথলেহেমের মধ্যেকার ভৌগোলিক সংযোগ স্থাপনকারী একটি অন্যতম স্থান।

আকাশপথে শহর দুটির মধ্যে দূরত্ব ২২ কিলোমিটার হলেও, ফিলিস্তিনিদের এই পথ পাড়ি দিতে অনেক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয় এবং ইসরায়েলি চেকপোস্ট পার হতে হয়, যা তাদের ভ্রমণকে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত দীর্ঘ করে তোলে।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের চূড়ান্ত আলোচনার সময় এই অঞ্চলটিকে শহর দুটির মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপনকারী হিসেবে ব্যবহারের আশা করা হয়েছিল।

পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘পিস নাউ’ এই ই-১ প্রকল্পকে ‘ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ এবং শান্তিপূর্ণ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা’র জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা ‘আরও অনেক বছরের রক্তপাতের’ কারণ হবে।

গাজায় চলমান যুদ্ধের মধ্যে বিশ্ব যখন সেদিকে মনোনিবেশ করেছে, তখন অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জন্য ইসরায়েলের বসতি সম্প্রসারণ এক কঠিন বাস্তবতা তৈরি করছে।

বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা, ফিলিস্তিনি শহর থেকে উচ্ছেদ, এবং চলাচলের ওপর বিধিনিষেধের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

একইসঙ্গে, ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকেও ইসরায়েলিদের ওপর কিছু হামলা হয়েছে।

বর্তমানে প্রায় ৭ লক্ষাধিক ইসরায়েলি নাগরিক অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে বসবাস করে।

১৯৬৭ সালে ইসরায়েল এই এলাকাগুলো দখল করে এবং ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের জন্য এটি চায়।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একমত যে, এই অঞ্চলে ইসরায়েলের বসতি নির্মাণ অবৈধ এবং শান্তির পথে এটি একটি বড় বাধা।

ইসরায়েলের বর্তমান সরকার ধর্মীয় এবং চরম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদদের দ্বারা গঠিত, যাদের বসতি স্থাপন আন্দোলনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

স্মোটরিচ, যিনি পূর্বে একজন প্রভাবশালী বসতি স্থাপনকারী নেতা ছিলেন এবং বর্তমানে অর্থমন্ত্রী, তাকে বসতি স্থাপন নীতিমালার বিষয়ে মন্ত্রিসভার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

তিনি পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীর সংখ্যা দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেকে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করেছে এবং এটিকে তাদের রাজধানী হিসেবে দাবি করে, যদিও আন্তর্জাতিকভাবে এর স্বীকৃতি নেই।

ইসরায়েল বলছে, পশ্চিম তীর একটি বিতর্কিত এলাকা, যার ভাগ্য আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হওয়া উচিত।

২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা থেকে তাদের বসতি সরিয়ে নেয়।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *