ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু কেন্দ্রে ইসরায়েলের হামলা: পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংসের পথে?
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে ইসরায়েল সম্প্রতি ইরানের তিনটি প্রধান পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। দেশটির নাতানজ, ইসফাহান এবং ফোরদো – এই তিনটি স্থানে চালানো হামলায় ইরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচিকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এই হামলার ফলে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
শুক্রবার চালানো হামলায় নাতানজ পরমাণু কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এখানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য ব্যবহৃত সেন্ট্রিফিউজগুলো অবস্থিত। যুক্তরাষ্ট্রের দুইজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, এই হামলায় কেন্দ্রের বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নাতানজের পাইলট ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্টের বাইরের অংশেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, নাতানজের বাইরের পরিবেশে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে, তবে কেন্দ্রের ভেতরে কিছু অংশে তেজস্ক্রিয়তা ও রাসায়নিক দূষণ হয়েছে।
অন্যদিকে, ইসফাহান পরমাণু কেন্দ্রে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ক্ষয়ক্ষতি সীমিত। তবে ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এখানে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। ইসফাহানে ইরানের বৃহত্তম পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র অবস্থিত, যেখানে প্রায় ৩ হাজার বিজ্ঞানী কাজ করেন।
ফোরদো পরমাণু কেন্দ্রটি ভূগর্ভে গভীর খাদের মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় এটি সহজে হামলার লক্ষ্যবস্তু নাও হতে পারে। আইএইএ জানিয়েছে, এই কেন্দ্রে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।
তবে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একটি ইসরায়েলি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। ফোরদোতে উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা বোমা তৈরির কাছাকাছি পর্যায়ে ছিল।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা এখন সাপের মাথার সঙ্গেই মোকাবিলা করছি।” তিনি আরও বলেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকাতে না পারলে তা ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
তবে ইরান তাদের পরমাণু কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করছে। দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাতানজের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়াটা সেন্ট্রিফিউজগুলোকে অকার্যকর করার একটি কৌশল হতে পারে। তবে ফোরদোর মতো সুরক্ষিত কেন্দ্রে হামলা চালানো কঠিন।
এই হামলার ফলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন