গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৩ জন নিহত, খাদ্য সংকটে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলার ঘটনা বাড়ছেই। শনিবার গাজা শহরের উপর চালানো হামলায় অন্তত ১৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ আটকা পড়ে আছে।
জানা গেছে, গাজা শহরের সাবরা এলাকার একটি আবাসিক ভবনে আঘাত হানে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে আহতদের উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে উদ্ধারকর্মীদের বেগ পেতে হচ্ছে।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, উদ্ধার কাজে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। এর আগে, উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুত করা ৪০টি প্রকৌশল যান ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েলি বিমান বাহিনী।
গত কয়েক মাসে গাজায় খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) মতে, গাজার প্রায় ২০ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। সেখানকার খাদ্য ভাণ্ডারগুলো খুব দ্রুতই ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গত দুই মাস ধরে গাজায় খাদ্য, জ্বালানি ও ঔষধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। গাজার অধিবাসীদের জন্য স্থানীয় কমিউনিটি কিচেনগুলোই বর্তমানে একমাত্র ভরসা। কারণ, ইসরায়েলি হামলায় সেখানকার খাদ্য উৎপাদন কেন্দ্রগুলো প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
ডব্লিউএফপি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ইসরায়েলের উপর চাপ সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে অবরোধ তুলে নেওয়া হয় এবং খাদ্য সহায়তা সরবরাহ করা যায়। তাদের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা সীমান্তের বাইরে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে, যা সীমান্ত খোলার সঙ্গে সঙ্গেই বিতরণ করা সম্ভব হবে। এই পরিমাণ খাদ্য এক মিলিয়ন মানুষের জন্য চার মাস পর্যন্ত যথেষ্ট।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরওয়ার প্রধান ফিলিপ লাজারিও বলেছেন, এই সংকট মানুষের তৈরি। জাতিসংঘের খাদ্য অধিকার বিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার মাইকেল ফাকরি জানিয়েছেন, ইসরায়েল কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়ার তোয়াক্কা না করে এই দুর্ভিক্ষ চালাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, গাজায় চিকিৎসা সরঞ্জামেরও চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস সাহায্য পাঠানোর জন্য অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকে হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া, গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলি অভিযান পুনরায় শুরুর পর থেকে ২ হাজার ৬২ জন নিহত হয়েছে।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা