ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের জেরে সেখানকার পরিবারগুলোর জীবন এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কায় দিনের পর দিন তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে কাটাতে হচ্ছে, যা শিশুদের মনে গভীর প্রভাব ফেলছে।
অন্যদিকে একদিকে যেমন জীবন বাঁচানোর তাগিদ, তেমনই মানসিক স্বাস্থ্য টিকিয়ে রাখাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত কয়েকদিনে ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় ইসরায়েলের আকাশে প্রায়ই সাইরেন বাজছে। এর সঙ্গে সঙ্গেই বাসিন্দাদের দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে হচ্ছে।
নব্বইয়ের দশকের পর থেকে ইসরায়েলে তৈরি হওয়া প্রতিটি বাড়িতেই বোমা হামলার আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করার আইন রয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এগুলো হয়তো অতিরিক্ত জিনিসপত্র রাখার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
এখন জীবন বাঁচাতে সেই আশ্রয়কেন্দ্রগুলোই একমাত্র ভরসা।
মধ্য ইসরায়েলের রিভি গিনজবার্গ তার তিন নাতির জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে দুটি গদি বিছিয়েছেন। তাদের জন্য কিছু খেলনা এবং ছবি আঁকার বইও রেখেছেন তিনি।
“আমরা জানি না আসলে কী হতে যাচ্ছে,” সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন। “দীর্ঘ সময়ের জন্য এখানে থাকতে হতে পারে, তাই আমরা জলখাবার, জল এবং শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস মজুত করেছি।”
পুরো ইসরায়েল জুড়েই পরিবারগুলোর মধ্যে এই অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। তারা জানে না এরপর কী হবে, এই পরিস্থিতির শেষ কোথায়।
ইসরায়েল ইতিমধ্যেই ইরানের বিরুদ্ধে তাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে, অন্যদিকে ইরানও প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুত।
টিভি এবং মোবাইল ফোনে সর্বশেষ খবর দেখতে দেখতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করার পর, গিনজবার্গের পরিবার আবার আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। পরিবারের সবাই একসঙ্গে থাকার কারণে কিছুটা হলেও মানসিক শান্তির জায়গা তৈরি হয়েছে।
“বাচ্চা এবং পরিবারের সঙ্গে থাকলে হাসা যায়,” গিনজবার্গ বলেন। “পরিস্থিতি মোটেই মজার নয়, তবে মানসিক শান্তি বজায় রাখতে হবে, পরিবারের সঙ্গে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে হবে।”
তবে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সবসময় নিরাপদ আশ্রয় দিতে পারছে না। সম্প্রতি, একটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র পেতাহ টিকভায় একটি পরিবারের আশ্রয়কেন্দ্রে আঘাত হানে, যেখানে অনেকে নিহত হয়।
ইসরায়েলের হোমফ্রন্ট কমান্ডের প্রতিনিধি, লেফটেন্যান্ট কর্নেল তালি ভার্সানো আইসমান জানান, “আশ্রয়কেন্দ্রের দেওয়ালে সরাসরি আঘাত হেনেছিল ক্ষেপণাস্ত্রটি। উপরের এবং নিচের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজন আহত হয়নি, তবে আশ্রয়কেন্দ্রই সবচেয়ে নিরাপদ স্থান।”
রেহোভোতের একটি অ্যাপার্টমেন্টে বসবাসকারী মোর মরিয়া শিপনি তার তিন সন্তানের কাছ থেকে মানসিক চাপ লুকানোর চেষ্টা করছেন।
“পালানোর কোনো জায়গা নেই,” সিএনএনকে তিনি বলেন। সাইরেন বাজলেই তিনি তার জরুরি ব্যাগ হাতে নিয়ে নিচে নামেন, যেখানে চার্জার, জল এবং জলখাবার সহ প্রয়োজনীয় জিনিস রয়েছে।
প্রায় ৩০ জন লোক একসঙ্গে আশ্রয় নেওয়ায় সেখানকার পরিবেশ দ্রুত গরম এবং সংকীর্ণ হয়ে যায়।
“বাচ্চারা জানতে চায়, কবে এই সব শেষ হবে, আমার কাছে এর কোনো উত্তর নেই,” শিপনি বলেন। “এটা হতাশাজনক। আমি তাদের আশ্বস্ত করতে পারি না যে সব ঠিক হয়ে যাবে। তাদের রাতে ঘুম থেকে তুলে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া ছাড়া আমার আর কিছু করার নেই।”
শিপনি তার পরিবারকে ইরানের প্রতি ইসরায়েলের উদ্বেগের কারণ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন, তবে তা কঠিন ছিল। তিনি বলেন, “নিজের রাজনৈতিক মতামত থেকে দূরে থাকা কঠিন, বিশেষ করে যখন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন।
তাদের সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন, তাই আমরা তাদের বলি, আমরা সবাই আমাদের সেরাটা করব।”
হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নয় বিটান জেরুজালেমের তার অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতে আশদোদে গিয়েছেন, যা গাজা থেকে প্রায় ২০ মাইল উত্তরে অবস্থিত একটি উপকূলীয় শহর।
তার অ্যাপার্টমেন্টে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই, তাই তাকে প্রতিবেশীর সঙ্গে শেয়ার করা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে হয়।
বিটান জানান, “আশ্রয়কেন্দ্রটি কয়েক বর্গমিটারের, যেখানে ১০ জনের জায়গা হয়, বসার জন্য মাত্র চারটি চেয়ার রয়েছে। যার কোলে শিশু থাকে, সে একটি চেয়ার পায়। সবাই শান্ত থাকার চেষ্টা করে এবং সাধারণত আমরা তা পারি।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন