গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলায় নতুন করে সংঘাত, শান্তির সম্ভবনাে ফাটল
ঢাকা, [তারিখ দিন মাস, ২০২৪]: গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বোমা হামলায় নতুন করে সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার (গতকাল) থেকে শুরু হওয়া এই হামলায় ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নারী ও শিশুসহ অন্তত ৩২০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের এই অভিযান অনির্দিষ্টকালের জন্য চলবে এবং এর পরিধি আরও বাড়তে পারে।
এতে দীর্ঘ ১৭ মাস ধরে চলা যুদ্ধের পুনরায় শুরু হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। গত জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পরই এই হামলার সূত্রপাত হয়।
তিনটি ধাপে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। এর প্রথম ধাপ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় ধাপে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহার এবং হামাসের হাতে বন্দী থাকা সকল জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু ইসরায়েল এই আলোচনার দিকে এগোতে রাজি হয়নি। যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা চলাকালীন সময়ে এই চুক্তি বহাল থাকার কথা ছিল।
কিন্তু ইসরায়েল মানবিক সহায়তা সামগ্রী পাঠানো বন্ধ করে দেয়, যা হামাসকে নতুন প্রস্তাব মেনে নিতে চাপ প্রয়োগের কৌশল ছিল। নতুন প্রস্তাবে হামাসকে তাদের হাতে থাকা জিম্মিদের অর্ধেক মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়, যার বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর প্রস্তাব ছিল।
তবে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেনি, যা প্রথম ধাপের চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। হামাস এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং ইসরায়েলকে বিদ্যমান চুক্তিকে বানচাল করার জন্য দায়ী করে।
ইসরায়েলের এই আকস্মিক হামলার ফলে ১৭ মাস ধরে চলা যুদ্ধে নতুন করে হাজার হাজার ফিলিস্তিনির প্রাণহানির সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কারণ হিসেবে এই হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করা হবে। হোয়াইট হাউস ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছে। হামাস নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গের জন্য দায়ী করেছে এবং জিম্মিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
তারা আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের ইসরায়েলকে এই ঘটনার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী করার আহ্বান জানিয়েছে। এই হামলা মুসলিমদের পবিত্র মাস রমজানে সংঘটিত হয়েছে।
গত ১৯শে জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির পর গাজায় বড় ধরনের কোনো সংঘাত হয়নি, তবে ইসরায়েলি হামলায় বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, নিহত ব্যক্তিরা হয় নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করেছিল, না হয় জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িত ছিল অথবা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু অভ্যন্তরীণ চাপের মধ্যে রয়েছেন। জিম্মি সংকট এবং ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থার প্রধানকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
নেতানিয়াহুর কট্টরপন্থী মিত্ররা গাজায় এমন কোনো চুক্তির বিরোধী, যা হামাসকে ধ্বংস করার শর্ত পূরণ করে না। এছাড়া, নেতানিয়াহুকে এই মাসের শেষ নাগাদ বাজেট পাস করতে হবে, অন্যথায় তার সরকার ভেঙে যেতে পারে এবং দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
গাজায় নতুন করে সংঘাত শুরু হলে তা পুরো অঞ্চলে প্রভাব ফেলতে পারে। ইরানের সমর্থনপুষ্ট ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকার কথা বলেছে, যা লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে নৌ-চলাচলে পুনরায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র হুতিদের ওপর নতুন করে বিমান হামলা চালিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, হুতিদের কোনো ধরনের হামলার জন্য ইরানকে এর ফল ভোগ করতে হবে।
গাজার এই নতুন সহিংসতার কারণে গত নভেম্বরে হিজবুল্লাহর সঙ্গে হওয়া যুদ্ধবিরতিও ভেঙে যেতে পারে। তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস