গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের ধ্বংসলীলা: বাফার জোনের নামে ফিলিস্তিনিদের জীবনে বিভীষিকা!

গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একটি বিতর্কিত পদক্ষেপ: সীমান্ত এলাকায় বাফার জোন তৈরি করতে ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ধ্বংস।

গাজা উপত্যকার সীমান্ত এলাকার কাছে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। জানা গেছে, ইসরায়েলি সেনারা সীমান্ত থেকে এক কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকার মধ্যে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দিতে সেখানকার ঘরবাড়ি, দোকান ও অন্যান্য স্থাপনাগুলো পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করছে।

এই অঞ্চলে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের অভিযোগ, তাদের জীবন ও জীবিকা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন করা হচ্ছে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বুলডোজার ব্যবহার করে একের পর এক বাড়িঘর মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে। বিস্ফোরক ব্যবহার করে ধ্বংস করা হচ্ছে কারখানা ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ভবন।

এমনকি, এক সময়ের উর্বর কৃষি জমিগুলোকেও ব্যবহার অযোগ্য করে তোলা হয়েছে। এই অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং সেখানে প্রবেশ করতে গেলেই সৈন্যদের গুলিতে নিহত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

সংবাদ সংস্থা সিএনএন-এর সঙ্গে কথা বলার সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি সেনা জানান, তাদের কাজ ছিল পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো। তিনি বলেন, “আমাদের কাজ ছিল একটির পর একটি স্থাপনা ধ্বংস করা, যেন সেখানে আর কোনো বসতি না থাকে।”

এই সেনা আরও জানান, তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ ছিল, সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি কোনো ফিলিস্তিনি যেন না থাকে।

ফিলিস্তিনিদের অভিযোগ, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ তাদের জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। সেখানকার বাসিন্দারা তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, তাদের চাষের জমি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং জীবন ধারণের অন্যান্য উপায়ও বন্ধ হয়ে গেছে।

সেখানের অধিবাসীরা বলছেন, এই অঞ্চলে বসবাস করা এখন তাদের জন্য এক বিভীষিকা।

মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবীরা বলছেন, বেসামরিক স্থাপনাগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। তাদের মতে, সামরিক প্রয়োজন ছাড়া বেসামরিক সম্পত্তি ধ্বংস করা যুদ্ধাপরাধের শামিল।

তারা আরও বলছেন, বাফার জোন তৈরির নামে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানো এবং তাদের হত্যা করাও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

গাজার খান ইউনিসের কাছে অবস্থিত একটি এলাকার স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সেখানে কয়েকশ’ ভবন সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, বাফার জোনের মধ্যে থাকা অনেক ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ফিলিস্তিনের এক কৃষক আব্দুল আজিজ আল-নাবাহিন এর দুঃখজনক অভিজ্ঞতার কথা জানা যায়। ৪০ বছর ধরে তিনি তার জমিতে ফল ও সবজির চাষ করতেন।

কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় তার বাড়ি এবং বাগান সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি জানান, তার ছেলে মাহমুদ সম্প্রতি বিয়ে করেছিলেন এবং তার একটি ৩ বছর বয়সী নাতনিও রয়েছে।

ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণে মাহমুদ নিহত হন। আব্দুল আজিজ বলেন, “তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা জানত আমরা শুধু কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম, কোনো প্রতিরোধ করিনি। তবুও তারা আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছে।”

তবে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে এই বাফার জোন তৈরির কথা স্বীকার করেনি। তারা কেবল জানিয়েছে, সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তারা কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *