গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেওয়ার কারণ: নতুন করে ইসরায়েলি হামলা
গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে দিয়ে ইসরায়েল পুনরায় হামলা শুরু করায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। মঙ্গলবার ভোরে চালানো বিমান হামলায় নিহত হয়েছে চার শতাধিক মানুষ।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে গাজায় যুদ্ধ পুনরায় শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ইসরায়েলি সেনারা গাজার উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়েছে। আল জাজিরা আরবি জানিয়েছে, ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো খান ইউনিসের আবাসন এলাকায় গোলাবর্ষণ করেছে।
আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজ্জুম জানান, “বেশিরভাগ বিমান হামলা চালানো হয়েছে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে, অস্থায়ী স্কুল এবং আবাসিক ভবনে, যেখানে মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।
বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪০৪ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যা বেশি।
ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অনেকে আটকা পড়েছে। ইসরায়েলের দাবি, হামাসের হাতে বন্দী থাকা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতেই তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
এছাড়াও তাদের দাবি, হামাস পুনরায় অস্ত্র সংগ্রহ করছে এবং নতুন করে হামলার পরিকল্পনা করছে।
তবে আল জাজিরার হামদাহ সালহুত জানিয়েছেন, “আসলে ইসরায়েলই দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল, যেখানে যুদ্ধ বন্ধ এবং গাজায় বন্দী ৫৯ জন ইসরায়েলিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল।
যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে যেতে ইসরায়েল গড়িমসি করছিল। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমর্থন জুগিয়েছিল।
অন্যদিকে, হামাস চেয়েছিল পূর্বে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী আলোচনা চলুক। হামাস এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে এবং একে “আন্তর্জাতিক ও মানবিক রীতিনীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন” হিসেবে বর্ণনা করেছে।
তাদের মতে, গাজার ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি এবং জ্বালানি সংকটের কারণে অনেক আহত ব্যক্তি হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারায় মারা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া :
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইসরায়েল পুনরায় হামলা শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করেছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে গাজায় প্রায় ৫৯ জন ইসরায়েলি বন্দী রয়েছে। এদের মধ্যে অর্ধেকেরও কম জীবিত আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে এবং জিম্মিদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলার কথা বলেছে।
জিম্মিদের পরিবারের সংগঠন এক বিবৃতিতে জানায়, “তাদের সবচেয়ে বড় ভয় সত্যি হয়েছে।” তারা তাদের সরকারকে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার জন্য দায়ী করেছে।
সংগঠনটি জানায়, “আমরা হতবাক, ক্ষুব্ধ এবং ভীত যে আমাদের প্রিয়জনদের হামাসের বন্দিদশা থেকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাহত করা হচ্ছে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ইসরায়েল হয়তো কখনোই গাজা ছাড়তে বা যুদ্ধ বন্ধ করতে চায়নি। উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার পরেও ইসরায়েল লিখিতভাবে জানায়নি যে তারা প্রথম ধাপের পর আর কোনো হামলা চালাবে না।
যদিও মিশর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীদের মৌখিক নিশ্চয়তার ভিত্তিতে হামাস শর্তগুলো মেনে নিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র, যারা ইসরায়েলের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী এবং সবসময় তাদের সমর্থন করে, ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারত।
কিন্তু এবার তারা ফিলিস্তিনিদের জীবন রক্ষার প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলের এই যুদ্ধ বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতের অংশ। তারা দাবি করছে, এটি তাদের নিরাপত্তার জন্য জরুরি।
লেবানন সরকারের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরের পর থেকেই ইসরায়েল সেখানে বোমা হামলা চালিয়ে আসছে। গত ১৬ মার্চ তারা দুটি গ্রামে হামলা চালিয়ে চারজন নিহত করেছে।
একই রাতে, সিরিয়ার দেরা শহরে ইসরায়েল দুইজন ব্যক্তিকে হত্যা করে। তাদের দাবি, সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুসারীদের ওপর তারা হামলা চালিয়েছিল।
তবে কেন তারা এমনটা করছে, তা স্পষ্ট নয়।
এছাড়াও, ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরগুলোতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তাদের দাবি, তারা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের নির্মূল করতে চাইছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা এর আগে আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলের জন্য তেমন কোনো হুমকি নয়।
মূলত, ২০২১ সালে ইসরায়েলের ঘন ঘন হামলা এবং দখলদারিত্বের প্রতিবাদে তারা গঠিত হয়েছিল, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা