গাজায় সামরিক অভিযান জোরদারের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ শুক্রবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, হামাস যদি ইসরায়েলের শর্ত মেনে না নেয়, তাহলে গাজা শহর ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা শহরে বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালানোর জন্য সেনাবাহিনীকে অনুমোদন দেওয়ার পর এই হুঁশিয়ারি এলো।
ক্যাটজ এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, “গাজায় হামাসের সন্ত্রাসী ও ধর্ষণকারীদের ওপর শীঘ্রই নরকের দরজা খুলে দেওয়া হবে যতক্ষণ না তারা যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইসরায়েলের শর্ত মেনে নেয়।”
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের শর্ত হলো সকল জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে এবং হামাসকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্র করতে হবে।
হামাস জানিয়েছে, তারা যুদ্ধ বন্ধের বিনিময়ে জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি আছে, তবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন ছাড়া তারা অস্ত্র ত্যাগ করতে রাজি নয়।
ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক দিনের মধ্যেই গাজা শহরে বড় ধরনের অভিযান শুরু হতে পারে। গাজা শহর হামাসের সামরিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্র, যেখানে তাদের সুড়ঙ্গপথের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে বলে ইসরায়েল মনে করে।
এছাড়াও, এখানে এখনো কয়েক লক্ষ বেসামরিক লোক আশ্রয় নিয়েছে এবং গাজার গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোও এখানে অবস্থিত।
এদিকে, হামাস সম্প্রতি আরব মধ্যস্থতাকারীদের দেওয়া একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও ইসরায়েল যদি এই প্রস্তাব গ্রহণ করে, তাহলে হয়তো অভিযানটি বিলম্বিত হতে পারে।
তবে অতীতেও এমন ঘোষণা এসেছে, যা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি।
প্রস্তাবটিতে জিম্মি ও বন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ারও প্রস্তাব রয়েছে।
নেতানিয়াহুর জোটের অভ্যন্তরে বিভেদ এবং ডানপন্থীদের বিরোধিতার কারণে ইসরায়েলি নেতারা এই ধরনের শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন।
অনেক ইসরায়েলি নাগরিক মনে করেন, এই অভিযানের ফলে হামাস-নেতৃত্বাধীন জঙ্গিদের গত বছরের ৭ অক্টোবর করা হামলার পর এখনো যারা জীবিত আছে, সেই প্রায় ২০ জন জিম্মির জীবন ঝুঁকিতে পড়বে।
আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ও আন্তর্জাতিক নেতারা সতর্ক করেছেন যে, এই অভিযান গাজার মানবিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
গাজার বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি কঠিন হতে পারে। সেখানকার বাসিন্দাদের অনেকে বলছেন, গাজার কোথাও নিরাপদ স্থান নেই, তাই বারবার স্থানান্তরের কোনো মানে হয় না।
অন্যদিকে, চিকিৎসা দলগুলো সতর্ক করেছে যে, রোগীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের কাছে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই।
তবে নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, জিম্মিদের মুক্ত করা এবং হামাসকে নির্মূল করার এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত উপায়। তিনি আরও বলেন, “হামাসকে পরাজিত করা এবং আমাদের সকল জিম্মিকে মুক্ত করা—এই দুটি বিষয় একই সূত্রে গাঁথা।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস