গাজা সিটিতে সামরিক অভিযান আরও জোরদার করতে ইসরায়েল রিজার্ভ সেনা মোতায়েন শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার থেকে হাজার হাজার রিজার্ভ সেনা সদস্যকে সক্রিয় করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনের গাজা শহরের উত্তরাংশ এবং মধ্যাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের অভিযান চালাচ্ছে। হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে চলমান এই যুদ্ধে ইতোমধ্যে গাজার অনেক এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
গাজা শহরের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত জেইতুন এবং সাজাইয়া—এই দুটি প্রধান এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকবার হামলা চালিয়েছে। একসময় জেইতুন ছিল গাজা শহরের বৃহত্তম এলাকা।
সেখানে বাজার, স্কুল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র-সহ বিভিন্ন স্থাপনা ছিল। কিন্তু গত এক মাসে এখানকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে।
রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে পড়েছে, আর ঘরবাড়িগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এটিকে এখন ‘বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
গাজা শহর হামাসের রাজনৈতিক ও সামরিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ইসরায়েলের দাবি, এখানে এখনও বিশাল সুড়ঙ্গপথের জাল রয়েছে, যদিও যুদ্ধের সময় একাধিকবার এখানে অভিযান চালানো হয়েছে।
বর্তমানে গাজার উত্তরাঞ্চলে কয়েক লক্ষ বেসামরিক নাগরিক আশ্রয় নিয়েছে। খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটের কারণে তারা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গত মাসে ঘোষণা করেছিল, এই অভিযানে প্রায় ৬০ হাজার রিজার্ভ সেনা সদস্যকে মোতায়েন করা হবে। এছাড়াও, বর্তমানে সক্রিয় থাকা আরও ২০ হাজার সেনার চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
খাদ্য সংকটের কারণে গাজায় অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। গত মাসে জাতিসংঘের খাদ্য সংকট বিষয়ক শীর্ষ সংস্থা গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি ঘোষণা করার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে, আগস্ট মাসে অপুষ্টির কারণে ১৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা গত কয়েক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
গাজায় চলমান যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৬৩ হাজার ৫৬৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৬০ হাজার ৬৬০ জন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করলেও, এর মধ্যে বেসামরিক নাগরিক এবং যোদ্ধা—কাকে কতজন, তা আলাদাভাবে উল্লেখ করেনি। তবে তাদের হিসাব অনুযায়ী, নিহতদের প্রায় অর্ধেকই নারী ও শিশু।
উল্লেখ্য, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হামাস সরকারের অংশ, তবে এর কর্মীরা সবাই স্বাস্থ্য পেশাদার। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং অনেক বিশেষজ্ঞ এই হিসাবকে যুদ্ধের হতাহতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান হিসেবে বিবেচনা করে।
যদিও ইসরায়েল এই সংখ্যাগুলো নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে, তবে তারা নিজস্ব কোনো হিসাব প্রকাশ করেনি।
যুদ্ধটি শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়েছিল, যাতে ১,২০০ জন নিহত হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই ছিল বেসামরিক নাগরিক।
এছাড়াও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। বর্তমানে, ৪৮ জন জিম্মি এখনও গাজায় বন্দী রয়েছে।
ইসরায়েলের ধারণা, তাদের মধ্যে প্রায় ২০ জন এখনও জীবিত আছে। অন্যদের হয় মুক্তি দেওয়া হয়েছে, না হয় তারা বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে মুক্তি পেয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস