গাজায় বন্দী নির্যাতনের অভিযোগ, ইসরায়েলের নতুন ক্যাম্পে? ভয়ঙ্কর সত্যি!

ফিলিস্তিনি বন্দিদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ, স্থানান্তরের পরও অবস্থার উন্নতি হয়নি।

জেরুজালেম থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলের কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দিদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, বন্দিদের স্থানান্তরের পরেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কুখ্যাত একটি কারাগারের পরিস্থিতি উন্নত করার কথা ছিল, কিন্তু বন্দিদের অভিযোগ, সেখানে নির্যাতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, গাজায় আটক ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। মারধর, অতিরিক্ত সময়ের জন্য হাতকড়া পরিয়ে রাখা, এবং স্বাস্থ্য ও খাবারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে তাদের। মানবাধিকার সংগঠন ‘হামোকেদ’-এর পরিচালক জেসিকা মন্টেল বলেন, “আমরা দেখেছি মানবিক কারাবাসের ন্যূনতম মানদণ্ডগুলিকেও এখানে অনুসরণ করা হচ্ছে না।”

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনেই কাজ করে।

গাজা থেকে আটককৃতদের রাখার জন্য নেগেভ মরুভূমিতে ‘সদে তেইমান’ নামে একটি কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছিল। হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পর আটককৃত সন্দেহভাজন জঙ্গিদের সেখানে রাখা হতো। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, সেখানে বন্দিদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হতো। পরে সেখান থেকে বন্দিদের ‘ওফার’ এবং ‘আনাতত’ ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলি বলছে, এই ক্যাম্পগুলোতেও নির্যাতনের একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।

‘হামোকেদ’ এবং ‘ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস-ইসরায়েল’-এর আইনজীবীরা ৩০ জনের বেশি বর্তমান ও প্রাক্তন বন্দির সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ‘ওফার’ এবং ‘আনাতত’-এ বন্দিদের অবস্থা মোটেও ভালো নয়। হামোকেদের আইনজীবী নাদিয়া দাক্কা জানান, বন্দিদের আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করতে গেলেও খারাপ ব্যবহার করা হতো।

গাজার সার্জন খালেদ আলসেরর জানিয়েছেন, ‘ওফার’ ক্যাম্পে থাকাকালীন তিনি অনেকবার মারধরের শিকার হয়েছেন। তার ভাষায়, “চোখের দিকে তাকালে, ওষুধ চাইলে অথবা আকাশের দিকে তাকালেও শাস্তি পেতে হতো।”

বন্দিদের দেওয়া অন্যান্য অভিযোগগুলো যাচাই করা কঠিন হলেও, তাদের বয়ানগুলো একই ধরনের। ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্টকে মার্চ মাসের শেষ পর্যন্ত ‘ওফার’-এ নির্যাতনের অভিযোগের জবাব দেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েল গাজায় হামাসের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে। তাদের মধ্যে অনেককে মুক্তি দেওয়া হলেও, এখনো অনেকে বন্দী অবস্থায় রয়েছে।

গত জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতির সময় কয়েকশ বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু গাজায় আবারও অভিযান শুরু হওয়ায়, আটকের ঘটনাও বাড়ছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী কতজন বন্দী রয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানায়নি।

বন্দিদের অভিযোগ, তাদের নিয়মিত মারধর করা হতো। অনেককে মাসের পর মাস হাতকড়া পরিয়ে রাখা হতো। এমনকি ঘুমের সময় এবং খাবার খাওয়ার সময়ও হাতকড়া খোলা হতো না। গোসলের জন্য সপ্তাহে একবার সুযোগ পাওয়া যেত।

একজন বন্দী জানান, আনাতত ক্যাম্পে তাদের সবসময় চোখ বেঁধে রাখা হতো। এছাড়া, প্রতি ঘন্টায় তাদের ঘুম থেকে তুলে আধ ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হতো।

সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, বন্দিদের নিয়মিত গোসলের সুযোগ দেওয়া হয় এবং তারা প্রতিদিন বাইরে যেতে পারে। তবে, অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে কিছু বন্দীকে মেঝেতে ঘুমাতে হতে পারে। আনাতত ক্যাম্পটি সম্প্রতি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, কারণ সেখানে স্বল্প মেয়াদে বন্দী রাখার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। তবে ‘সদে তেইমান’ এখনো ব্যবহার করা হচ্ছে।

চিকিৎসা ও খাবারের মান নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। খালেদ আলসেরর জানান, তাকে আলসারের ওষুধ দিতে অস্বীকার করা হয়। খাবার হিসেবে দেওয়া হতো সামান্য রুটি, শসা বা টমেটো, মাঝে মাঝে চকলেট বা কাস্টার্ড।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগের পর ‘ওফার’-এ খাবারের মেনুতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। বর্তমানে আলু এবং ফালাফেল দেওয়া হচ্ছে, যা কিছুটা ভালো। তবে এখনো তা পর্যাপ্ত নয়।

সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, বন্দিদের খাবারের মেনু তৈরি করেন পুষ্টিবিদ এবং তাদের পর্যাপ্ত জল সরবরাহ করা হয়।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *