গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান জোরদার হওয়ার প্রেক্ষাপটে সেখানকার বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। একইসঙ্গে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ায় সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে এমন খবর জানা গেছে।
রবিবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার মধ্যাঞ্চলে, যেখানে আগে সেনাদের তেমন আনাগোনা ছিল না, সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য নতুন করে এলাকা ছাড়ার সতর্কতা জারি করেছে। এই নির্দেশের ফলে দেইর আল-বালাহ শহর থেকে রাফা ও খান ইউনিসের দিকে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে।
কাতার মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা চললেও কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বারবার জোর দিয়ে বলছেন, গাজায় সামরিক অভিযান জোরদার করা হলে হামাস আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য হবে। কিন্তু আলোচনার প্রক্রিয়া গত কয়েক মাস ধরে থমকে আছে।
যেসব এলাকায় লোকজনকে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেখানে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর কার্যালয় রয়েছে। তারা এখনো পর্যন্ত ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তের ওপর কোনো মন্তব্য করেনি।
সামরিক মুখপাত্র আভিখাই আদ্রাই সতর্ক করে বলেছেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ চালানো হবে। তিনি বাসিন্দাদের, বিশেষ করে যারা তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের গাজার দক্ষিণাঞ্চলে মুওয়াসি নামক স্থানে যেতে বলেছেন। মুওয়াসি এলাকাটিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী মানবিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছে।
গাজায় প্রায় ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিবাসীর জীবন চরম মানবিক সংকটে পড়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালালে ২১ মাসের যুদ্ধের সূচনা হয়। হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এখনো পর্যন্ত ৫০ জন জিম্মি সেখানে রয়েছে, যাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি জীবিত নেই বলে ধারণা করা হয়।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫৮,০০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে কতজন জঙ্গি, তা মন্ত্রণালয় জানায়নি। তবে তাদের মতে, নিহতদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। যদিও গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হামাস সরকারের অংশ, তবুও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো হতাহতের নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র হিসেবে তাদেরকেই বিবেচনা করে।
অন্যদিকে, জিম্মিদের পরিবারের সংগঠন ‘হোস্টেজ ফ্যামিলি ফোরাম’ এই এলাকা ছাড়ার ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কাছে জানতে চেয়েছে, গাজার মধ্যাঞ্চলে তারা আসলে কী করতে চাইছে। সংগঠনটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট যুদ্ধ পরিকল্পনা ছাড়া কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ এনেছে।
সংগঠনটি আরও বলেছে, ‘আর নয়! ইসরায়েলের মানুষ যুদ্ধ বন্ধ করতে এবং জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য একটি ব্যাপক চুক্তির পক্ষে।’ শনিবার রাতে তেল আবিবে যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস