গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়া বহর আটকাল ইসরায়েলি সেনা, অতঃপর…

গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়া বহর আটকাল ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী, আটক বহু।

ভূমধ্যসাগরে গাজা অভিমুখে যাওয়া একটি নৌবহরকে প্রতিহত করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। বুধবার ভোরে চালানো এই অভিযানে বহু সংখ্যক অ্যাক্টিভিস্টকে আটক করা হয়েছে।

ফ্লোটিলা বা নৌবহরটির আয়োজক এবং ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এই খবর জানা গেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আটক ১৪৫ জন অ্যাক্টিভিস্ট সুস্থ আছেন এবং তাদের ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শীঘ্রই তাদের ফেরত পাঠানো হবে।

গত সপ্তাহেও প্রায় ৪৫০ জন অ্যাক্টিভিস্ট, যাদের মধ্যে ইউরোপীয় সংসদ সদস্য এবং জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গও ছিলেন, গাজায় মানবিক ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ৪০টির বেশি নৌকায় করে যাওয়া সেই বহরটিকেও ইসরায়েল প্রতিহত করে।

ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছিল এবং বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ হয়। ইতালিতে একদিনের ধর্মঘটও পালন করা হয়।

বুধবারের অভিযানে জড়িত ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’ এবং ‘হাজার মাদলেন টু গাজা’ নামক সংগঠনগুলো এই আটকের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা এটিকে ‘বেআইনি’ ও ‘অন্যায়’ আখ্যা দিয়েছে।

আটককৃতদের মধ্যে চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ এবং তিনজন তুর্কি সংসদ সদস্যও ছিলেন। বহরটি গাজার হাসপাতালগুলোর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছিল।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছে, “আইনসম্মত নৌ অবরোধ ভেঙে যুদ্ধ অঞ্চলে প্রবেশের আরেকটি ব্যর্থ চেষ্টা।”

সংগঠনগুলোর দাবি, গাজা উপকূল থেকে প্রায় ১২০ নটিক্যাল মাইল দূরে তাদের নৌবহরটিকে আটক করা হয়। আয়োজকদের প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, দ্রুতগামী জাহাজগুলো বহরের নৌকাগুলোর কাছে আসে এবং ইসরায়েলি সেনারা সেগুলোতে আরোহণ করে।

কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

গত সপ্তাহের বহর থেকে ফেরত পাঠানো অ্যাক্টিভিস্টদের কেউ কেউ ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মীদের দ্বারা দুর্ব্যবহারের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছিলেন। যদিও ইসরায়েল তা অস্বীকার করেছে।

গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড নিয়ে যখন বিশ্বজুড়ে সমালোচনা বাড়ছে, ঠিক তখনই এই নৌবহর পাঠানোর ঘটনা ঘটল। হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

বর্তমানে, মিশরের শার্ম আল-শেখে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে তৃতীয় দিনের মতো আলোচনা চলছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, কাতার এবং তুরস্কের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে চালানো এক হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত হওয়ার পর এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ওই দিন ২৫১ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল।

এখনো প্রায় ৪৮ জন জিম্মি গাজায় আটক রয়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত আছে বলে ধারণা করা হয়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৭,০০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তবে এই সংখ্যায় বেসামরিক লোক ও যোদ্ধা উভয়ই অন্তর্ভুক্ত।

হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকারের অংশ হিসেবে মন্ত্রণালয় এই তথ্য সরবরাহ করে থাকে এবং বিশেষজ্ঞরা এটিকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করেন। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের প্রায় অর্ধেকই নারী ও শিশু।

২০০৭ সাল থেকে হামাস গাজার ক্ষমতা দখলের পর থেকে ইসরায়েল বিভিন্ন মাত্রায় গাজায় অবরোধ জারি রেখেছে। ইসরায়েল দাবি করে, এটি জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রয়োজনীয়।

তবে সমালোচকরা এই নীতিকে সম্মিলিত শাস্তি হিসেবে বর্ণনা করেন।

যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েল অবরোধ আরও জোরদার করে, কিন্তু পরে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে তা কিছুটা শিথিল করে। মার্চ মাসে, তারা গাজার খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য সামগ্রীর প্রবেশ বন্ধ করে দেয়, যা সেখানকার দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটায়।

নৌবহরগুলোর আয়োজকদের দাবি, তারা ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙতে এবং সমুদ্রপথে মানবিক করিডোর তৈরি করতে চায়, কারণ স্থলপথে গাজায় খুব কম সাহায্য পৌঁছাচ্ছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *