গাজায় ইসরায়েলের ভূমি দখলের ঘোষণা: ভয়াবহ পরিণতির শঙ্কা!

গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান আরও তীব্র হতে চলেছে, এমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কতজ বুধবার ঘোষণা করেছেন, গাজা উপত্যকার বিশাল এলাকা তারা “জব্দ” করতে চায়।

এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের সামরিক তৎপরতা আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরেই গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণ চলছে।

এবার তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে এবং অবকাঠামো ধ্বংস করতে তারা সেনাদের আরও সক্রিয় করবে। একই সঙ্গে, ইসরায়েলের নিরাপত্তা এলাকার অন্তর্ভুক্ত করতে গাজার উল্লেখযোগ্য অংশ তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী কতজ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলো থেকে তারা যেন দ্রুত সরে যায়। বিশেষ করে, হামাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি ফিলিস্তিনিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া যায়।

এই ঘোষণার আগে, গাজার খান ইউনিস ও রাফাহ শহরে ব্যাপক বিমান হামলা চালানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এসব হামলায় অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন।

নিহতদের মধ্যে পাঁচজন নারী, যাদের মধ্যে একজন ছিলেন গর্ভবতী এবং দুজন শিশুও রয়েছে। বুধবার সকালে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। একই পরিবারের তিনজন পুরুষ সদস্যও নিহত হয়েছেন। গাজা সিটি এবং রাফাহ এলাকায়ও ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজার দক্ষিণে অতিরিক্ত একটি ডিভিশন মোতায়েন করেছে। গত সপ্তাহে, রাফাহ এবং খান ইউনিসের উত্তর দিকে আল-মাওয়াসির দিকে সাধারণ মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

আল-মাওয়াসি এলাকাকে মানবিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হলেও, সেখানেও বোমা হামলা হয়েছে। ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা গিশা’র তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার চারপাশে প্রায় ৬২ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে বাফার জোন হিসেবে ব্যবহার করছে, যা গাজা উপত্যকার প্রায় ১৭ শতাংশ।

গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় ইসরায়েল নতুন করে বোমা হামলা শুরু করে এবং এরপর স্থল সেনাদেরও মোতায়েন করা হয়। এর ফলে, প্রায় দুই মাস ধরে চলা যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়।

এই যুদ্ধবিরতির সময় হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে বন্দী বিনিময়ের কথা ছিল। কিন্তু ইসরায়েলি সরকার বারবার আলোচনা পিছিয়ে দেয়।

জাতিসংঘের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গাজার প্রায় ২৩ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা, খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে, যা হামাসকে চাপে ফেলার একটি কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য আলোচনা শুরু করার চেষ্টা চললেও, এখনো পর্যন্ত কোনো ফল পাওয়া যায়নি।

গাজায় পুনরায় সংঘর্ষ শুরু হওয়ায় ইসরায়েলের ভেতরেও বিক্ষোভ হচ্ছে, বিশেষ করে জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায়।

এতে ১,২০০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক। এছাড়াও, প্রায় ২৫০ জনকে বন্দী করা হয়।

গাজায় ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত ৫০,৩৫৭ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *