যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টিতে ইসরায়েল নীতি নিয়ে বিভাজন, গাজায় মানবিক সংকট ঘিরে বাড়ছে বিতর্ক।
যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে ইসরায়েল নীতি নিয়ে গভীর ফাটল দেখা যাচ্ছে। গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের কারণে সৃষ্ট মানবিক সংকট এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের প্রতি অসন্তুষ্টির জেরে এই বিভাজন আরও তীব্র হচ্ছে। দলের অনেক নেতাই মনে করছেন, নেতানিয়াহুর প্রতি সমর্থন জানানোয় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, যা আগামী নির্বাচনগুলোতে প্রভাব ফেলতে পারে।
সম্প্রতি, ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের একটি প্রস্তাব সিনেটে উত্থাপিত হলে রেকর্ড সংখ্যক ডেমোক্রেট সদস্য এর পক্ষে ভোট দেন, যা এই বিতর্কের একটি বড় উদাহরণ। এছাড়াও, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি নতুন প্রস্তাবের পক্ষেও সমর্থন বাড়ছে।
ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত অনেক ডেমোক্রেট নেতাই নেতানিয়াহু সরকারের সমালোচনা করছেন। তাদের মতে, গাজায় শিশুদের মৃত্যু ও খাদ্য সংকটের চিত্র অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
এই পরিস্থিতিতে, হাওয়াই রাজ্যের সিনেটর ব্রায়ান শ্যাৎজ, যিনি নিজেও একজন ইহুদি, মনে করেন নেতানিয়াহু সরকারের নীতির কারণে ইসরায়েল এবং বিশ্বজুড়ে ইহুদিদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। নিউ জার্সির কংগ্রেসম্যান মিকি শেরিলও ভোটারদের মধ্যে এই পরিবর্তনের ইঙ্গিত পেয়েছেন।
তার মতে, ৭ই অক্টোবরের হামলার পরে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি সমর্থন জানানো হলেও, নেতানিয়াহুর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়। মিনেসোটা রাজ্যের গভর্নর টিম ওয়ালজ মনে করেন, ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও এই বিতর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে থাকবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহু সরকারের নীতির কারণে শুধু ডেমোক্রেটদের মধ্যেই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও অসন্তোষ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে, অনেক ডেমোক্রেট নেতাই নেতানিয়াহুর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছেন।
এমনকি, কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্রেট নেতা প্রকাশ্যে নেতানিয়াহুর সমালোচনা করতেও দ্বিধা করছেন না।
অন্যদিকে, পেনসিলভানিয়ার সিনেটর জন ফেটারম্যানের মতো কিছু ডেমোক্রেট নেতা এখনো নেতানিয়াহুর প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে। তাদের যুক্তি হলো, ইসরায়েলের নির্বাচিত নেতার প্রতি সমর্থন জানানো জরুরি।
তবে, গাজার পরিস্থিতি নিয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এই বিভাজনের মূল কারণ হলো গাজায় মানবিক সংকট। ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে সেখানে খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের কারণ। অনেকেই মনে করেন, নেতানিয়াহু সরকার গাজায় পর্যাপ্ত মানবিক সাহায্য পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে, ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে নেতানিয়াহুর নীতির বিরোধিতা বাড়ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ডেমোক্রেটিক পার্টির এই বিভাজন আগামী নির্বাচনে দলটির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে ডেমোক্রেটদের অবস্থান এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন