গাজায় ইসরায়েলের বিধিনিষেধ: ৭০ শতাংশ এলাকা ‘নিরাপদ নয়’, দেখা দিয়েছে দুর্ভিক্ষের চরম আশঙ্কা।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সমন্বয় অফিসের (ওসিএইচএ) তথ্য অনুযায়ী, গাজার ৭০ শতাংশ এলাকার উপর ফিলিস্তিনিদের প্রবেশাধিকার সীমিত করেছে ইসরায়েল। হয় বিশাল এলাকাকে ‘নিরাপদ নয়’ ঘোষণা করা হয়েছে, অথবা তাদের জোর করে বাস্তুচ্যুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ গাজায় রাফাহ গভর্নরেটের বেশিরভাগ এলাকাকে ‘নিরাপদ নয়’ ঘোষণা করা হয়েছে। মার্চ মাসের শেষ দিক থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে বাস্তুচ্যুতির নির্দেশ জারি করেছে। উত্তর গাজায়ও একই অবস্থা। গাজা শহরের প্রায় পুরোটাই এই নির্দেশের আওতায় পড়েছে, শুধুমাত্র উত্তর-পশ্চিমের কিছু অংশ এখনো এর বাইরে রয়েছে।
শুজাইয়া এলাকার পূর্বের পুরো এলাকা এবং ইসরায়েলি সীমান্ত বরাবর একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলকে ‘নিষেধাজ্ঞা এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী কীভাবে তাদের বাস্তুচ্যুতির নির্দেশ ক্রমাগত বাড়িয়েছে, তা বিভিন্ন মানচিত্রে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। ১৮ই মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে এই প্রক্রিয়া আরও তীব্র হয়েছে।
অন্যদিকে, গাজায় নতুন করে সামরিক অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এই অভিযানে ইসরায়েলি সেনা সদস্যরা গাজার দখলকৃত এলাকা ধরে রাখবে এবং সেখানে তাদের ‘দীর্ঘমেয়াদী উপস্থিতি’ নিশ্চিত করবে বলেও তিনি জানান। নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা এরই মধ্যে ৬০ হাজার রিজার্ভ সেনা সদস্যকে ডাকার এবং গাজার ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য খাদ্য ও জরুরি সরবরাহ বিতরণের দায়িত্ব ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে।
গাজার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার সংবাদদাতা তারেক আবু আজ্জুম জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযান এবং গাজার বিশাল এলাকা পুনর্দখলকে সম্মিলিত শাস্তির একটি রূপ হিসেবে দেখছে। তাদের মতে, এর মাধ্যমে গাজার জনমিতি ও রাজনৈতিক মানচিত্র পরিবর্তনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
অনেক ফিলিস্তিনি মনে করেন, ইসরায়েল কোনো রাজনৈতিক সমাধানের চেয়ে গাজার উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে বেশি আগ্রহী। বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় তারা ভীত ও উদ্বিগ্ন। তাদের ধারণা, হামাসের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করার পাশাপাশি ইসরায়েল গাজার বাসিন্দাদের বিতাড়িত করতে এবং সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করতে চাইছে।
মানবিকতার মোড়কে সামরিক কৌশল ব্যবহার করে তারা এটা করতে চাইছে। এর মধ্যে রয়েছে গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালানো এবং ত্রাণ বিতরণে কড়াকড়ি আরোপ করা।
তবে, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে প্রতিরোধের মনোভাব এখনো প্রবল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তাদের দৃঢ়তা এবং কোনো মূল্যে গাজা না ছাড়ার অঙ্গীকার দেখা যাচ্ছে।
ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) জানিয়েছে, গাজায় দুর্ভিক্ষের চরম ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সেখানকার বাজার ও ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে কোনো খাবার অবশিষ্ট নেই। ইসরায়েলের মানবাধিকার সংস্থা ‘ব্যাটসিলম’ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় ‘যুদ্ধ-অস্ত্র হিসেবে অনাহার ব্যবহারের’ অভিযোগ এনেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ইসরায়েলের খাদ্য সংকটের শিকার হওয়া মানুষের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিশু।
পিআরসিএস তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, “পুষ্টির অভাবে সেখানকার মানুষ আবারও দুর্ভিক্ষের চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। বাস্তুচ্যুত হওয়া দশ লক্ষাধিক মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।” তাদের খাদ্য মজুদও প্রায় শেষ হয়ে গেছে।
বর্তমানে কিছু ‘ডাল জাতীয় খাদ্য’ কমিউনিটি কিচেনে বিতরণ করা হচ্ছে, যা বাস্তুচ্যুত হওয়া কিছু মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটাতে কাজে লাগছে।
১৮ই মার্চ হামাসের সঙ্গে প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় অন্তত ২,৪৫৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। অবরুদ্ধ গাজায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২,৫৬৭ জনে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা