গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান তীব্রতর হওয়ার ফলে সেখানকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এলাকাকে বর্তমানে ‘নো-গো জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে, অথবা সেখানকার বাসিন্দাদের স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে, বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, যা মানবিক সংকট আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয় (OCHA) জানিয়েছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে রাফার দক্ষিণাঞ্চল এবং গাজা শহরের কিছু অংশ। ৩১শে মার্চ রাফাহর একটি বড় অংশে নতুন করে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। তাদের দাবি, তারা সেখানে ‘ব্যাপক শক্তি নিয়ে’ লড়াইয়ে ফিরছে। অন্যদিকে, গাজা শহরেও নিরাপত্তা অঞ্চল সম্প্রসারণের জন্য শুক্রবার সকালে নতুন করে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনারা।
এই পরিস্থিতিতে, ইতোমধ্যেই বহুবার বাস্তুচ্যুত হওয়া ফিলিস্তিনিরা আবারও ঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকেরই আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। গাজা শহর থেকে বিতাড়িত হওয়া আবু হাজেম খালেফ আল জাজিরাকে বলেন, “আমাদের প্রধান সমস্যা এখন বাস্তুচ্যুতি। আমরা জানি না কীভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করব। গাজা শহরের পশ্চিমে একটি রাস্তার পাশে একটি তাঁবু টানানোর মতো জায়গা খুঁজছি।” আরেক বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি, মাহমুদ আল-ঘারাবলি জানান, “আমরা ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। কোথায় যাব, সেই চিন্তায় দিশেহারা হয়ে গেছি।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হামাসকে চাপে ফেলার জন্য গাজায় সামরিক অভিযান আরও জোরদার করার হুমকি দিয়েছেন। বুধবার এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, “আমরা এখন গাজাকে বিভক্ত করছি এবং ধীরে ধীরে চাপ বাড়াচ্ছি, যাতে তারা আমাদের জিম্মিদের মুক্তি দেয়।” শুক্রবার স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবারের হামলায় নিহত হয়েছিলেন ১১২ জন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা ছিল বেশি।
গাজার আল-আহলি হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, সেখানকার পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বর্ণনা করে আল জাজিরার প্রতিনিধি হানি মাহমুদ বলেন, “আমরা এখানে মৃতদেহগুলো মাটিতে পড়ে থাকতে দেখছি, সংখ্যাটা ডজন ছাড়িয়ে গেছে। ডাক্তাররা অসহায়, তারা জানেন না কী করবেন। হাসপাতালের ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে তারা জীবন বাঁচাতে পারছেন না।”
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ই অক্টোবর হামাসের হামলায় ১,১৩৯ জন ইসরায়েলি নিহত হয় এবং দুই শতাধিক মানুষকে জিম্মি করা হয়। এরপর, ১৮ই মার্চ হামাসের সঙ্গে আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর ইসরায়েল আবারও গাজায় হামলা শুরু করে। নেতানিয়াহু হামাসের কাছে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি এবং ত্রাণসহ আরও কিছু বিষয় ছাড় দেওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি চান, তবে যুদ্ধ বন্ধ বা সেনা প্রত্যাহারের কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি নন। হামাস অবশ্য আগের তিনটি পর্যায়ে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পুনর্বহাল করতে চাইছে এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে সকল জিম্মিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত।
গাজায় ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫০,৫২৩ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১,১৪,৬৩৮ জনের বেশি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা