গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান জোরদার, খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় বাড়ছে উদ্বেগ।
গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান আরও তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার মানবিক পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলে এবং দক্ষিণাঞ্চলে অভিযান চালাচ্ছে, যা ‘গিডিওনের রথ’ নামে পরিচিত।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সতর্ক করে বলেছেন, গাজায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিলে মিত্র দেশগুলোর সমর্থন হারানো যেতে পারে।
গত কয়েক দিন ধরে গাজায় ব্যাপক বোমা হামলা চালানো হচ্ছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, হামলায় ইতোমধ্যে বহু পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত রাখবে এবং হামাস যদি জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি না হয়, তাহলে এই অভিযান আরও জোরদার করা হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের মধ্যেই এই অভিযান শুরু হয়। ট্রাম্পের এই সফরে যুদ্ধবিরতি বা জিম্মি মুক্তির বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি।
এর পরেই ইসরায়েল গাজায় তাদের অভিযান আরও জোরদার করে।
গাজায় ইসরায়েলের এই নতুন অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হলো হামাসকে পরাজিত করা এবং গাজায় আটক অবশিষ্ট জিম্মিদের উদ্ধার করা। ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা গত ৫ মে এই অভিযানের অনুমোদন দেয়।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা গাজার সব এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়।
অন্যদিকে, গাজায় খাদ্য সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, তারা গাজায় ‘প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্য’ সরবরাহ করতে রাজি হয়েছেন, যাতে সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা না দেয়।
তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, গাজায় খাদ্য সরবরাহ বন্ধ থাকলে ইসরায়েল তার মিত্র দেশগুলোর সমর্থন হারাতে পারে। জাতিসংঘের মতে, ১৯ মাস ধরে চলা সংঘাত এবং ব্যাপক বাস্তুচ্যুতির কারণে গাজার প্রায় ২১ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।
খাদ্য সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করতে একটি নতুন সহায়তা বিতরণ প্রক্রিয়া তৈরির চেষ্টা চলছে। ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ নামে একটি মার্কিন-সমর্থিত সংস্থা এই কাজটি করবে।
তবে এই প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে। জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন যে, এটি পর্যাপ্ত নয় এবং বেসামরিক নাগরিকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
এদিকে, কাতার-এ হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা চলছে। হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা কোনো শর্ত ছাড়াই আলোচনার জন্য প্রস্তুত।
তবে, জিম্মি মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতি নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। হামাসের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, তারা দুই মাসের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ৭ থেকে ৯ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি।
তবে, অন্য এক নেতা এই প্রস্তাব অস্বীকার করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় চলমান যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গাজায় খাদ্য সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করবে।
গাজায় ইসরায়েলি অভিযান এবং মানবিক সংকটের এই প্রেক্ষাপটে, সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে বিপর্যস্ত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবিলম্বে এই সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন