গাজায় ইসরায়েলের হামলা: জাতিসংঘের সতর্কবার্তা, বাড়ছে মানবিক বিপর্যয়!

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নারী ও শিশুর মৃত্যু বাড়ছে, গভীর উদ্বেগ জাতিসংঘের।

জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজায় ইসরায়েলের ক্রমাগত হামলায় ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে। সর্বশেষ ভোর রাতের হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে সাতজনই শিশু। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি শুক্রবার এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

শামদাসানি গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ, বাস্তুচ্যুতি এবং মৌলিক চাহিদা থেকে সেখানকার মানুষদের বঞ্চিত করার বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, ইসরায়েলের বিমান হামলায় নারী ও শিশুদের মৃত্যুহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ১৮ই মার্চ থেকে ৯ই এপ্রিলের মধ্যে আবাসিক ভবন ও বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরায়েল অন্তত ২২৪টি হামলা চালিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ৩৬টি হামলায় নিহতদের সবাই ছিলেন নারী ও শিশু।

শামদাসানি ৬ই এপ্রিল দেইর আল-বালাহ-র আবু ইসা পরিবারের একটি আবাসিক ভবনে চালানো হামলার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে এক বালিকা, চারজন নারী এবং চার বছর বয়সী একটি শিশুর মৃত্যু হয়। এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে খান ইউনিসে চালানো ইসরায়েলি বিমান হামলায় একই পরিবারের অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে সাতজনই শিশু। গাজার অন্যান্য অংশেও শুক্রবার আরও তিনজন নিহত হয়েছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজ্জুম জানিয়েছেন, গাজাজুড়ে ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু মানুষ আটকা পড়েছে। উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা শিশুদের কান্না এবং সাহায্য চেয়ে আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে।

গত ১৮ই মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় হামলা জোরদার করেছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এরপর থেকে এ পর্যন্ত ১৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ইসরায়েল এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। এমনকি, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য ইসরায়েল কর্তৃক চিহ্নিত ‘নিরাপদ এলাকাগুলোতেও’ হামলা চালানো হচ্ছে।

শামদাসানি উদাহরণ হিসেবে খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের সরে যেতে বলেছিল। তিনি জানান, সেখানে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত মানুষের তাঁবুগুলোতেও হামলা অব্যাহত রয়েছে এবং ১৮ই মার্চের পর থেকে এ ধরনের অন্তত ২৩টি ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিসের এই উদ্বেগের মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (WHO) সতর্ক করেছে যে, গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওষুধের মজুদ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। ফলে হাসপাতালগুলো আংশিকভাবেও চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা রিক পিপারকর্ন জানান, “আমাদের তিনটি গুদামে অ্যান্টিবায়োটিক, স্যালাইন ও রক্তের ব্যাগসহ জরুরি ঔষধের সংকট দেখা দিয়েছে।” ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মতে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার কারণে গত এক সপ্তাহে কয়েক লক্ষ মানুষের জন্য খাবার পানির সরবরাহও কমে গেছে। গাজা পৌরসভার মুখপাত্র হুসনি মায়ানা বলেন, “আমরা এখন গাজা শহরে তীব্র তৃষ্ণা সংকটের মধ্যে বাস করছি। পরিস্থিতি একই রকম থাকলে আগামী দিনগুলোতে আমাদের কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হতে পারে।”

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৫০,৮৮৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। গভার্নমেন্ট মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা হাজার হাজার মানুষকে মৃত ধরে নিয়ে মৃতের সংখ্যা ৬১,৭০০ ছাড়িয়ে গেছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *