গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা, ভেঙে গেল যুদ্ধবিরতি চুক্তি। গাজায় মঙ্গলবার ভোরে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো ব্যাপক হামলা চালিয়েছে।
এতে অন্তত ৪০৪ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বহু শিশুও রয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অনেক মানুষ চাপা পরে আছেন, ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে ১৯শে জানুয়ারি থেকে চলা দুই মাসের যুদ্ধবিরতি এই হামলার ফলে ভেঙে গেছে।
ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে। জাবালিয়া, বেইত হানুন, গাজা সিটি, নুসাইরাত, দেইর আল-বালাহ, খান ইউনিস এবং রাফাহ-এর মতো এলাকাগুলো হামলার শিকার হয়েছে।
এমনকি আল-মাওয়াসি অঞ্চলের মতো নিরাপদ মানবিক করিডোর হিসেবে চিহ্নিত স্থানগুলোও বাদ যায়নি।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আরবি ভাষার মুখপাত্র আভিচাই আদ্রেই এক বিবৃতিতে ঐ এলাকার বাসিন্দাদের দ্রুত সরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জানান, ঐ এলাকাগুলো এখন ‘বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র’।
বাসিন্দাদের গাজা শহরের পশ্চিমাঞ্চলে অথবা খান ইউনিসে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।
গত ১৫ই জানুয়ারি, ইসরায়েল এবং হামাস গাজায় ৪৬০ দিনের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য তিন-পর্যায়ের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছিল। ১৯শে জানুয়ারি থেকে এই চুক্তি কার্যকর হয়।
এই চুক্তিতে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করা, গাজায় আটক বন্দীদের মুক্তি এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ বাড়িতে ফেরার সুযোগ দেওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু ১৯শে জানুয়ারি থেকে ১৭ই মার্চের মধ্যে ইসরায়েল বহুবার এই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে। এতে গাজায় অন্তত ১৭০ জন নিহত হয়, যা প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিনজনের মৃত্যুর সমান।
গাজার কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলের ৩০০-এর বেশি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের প্রমাণ নথিভুক্ত করেছে। এর মধ্যে সামরিক অভিযান, গোলাবর্ষণ, বিমান হামলা, নজরদারি বৃদ্ধি এবং ত্রাণ সরবরাহে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা রয়েছে।
অন্যদিকে, গাজায় মানবিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে। ২রা মার্চ, যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় শেষ হওয়ার পর ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেয়।
এর ফলে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এই পদক্ষেপের কারণে বিশ্বজুড়ে নিন্দা জানানো হয় এবং ইউরোপীয় দেশগুলো হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায় যে, এই অবরোধ আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করতে পারে।
ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো গাজার বাইরে আটকা পড়ায় মানবিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। খাদ্য ও পুষ্টির অভাবে ঝুঁকি বাড়ছে।
মুসলমানদের পবিত্র মাস রমজানের দ্বিতীয় ভাগে এই হামলাগুলো চালানো হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধে এ পর্যন্ত অন্তত ৪৮,৫৭৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ১,১২,০৪১ জন আহত হয়েছেন।
অর্থাৎ, গাজার প্রতি ৫০ জনের মধ্যে ১ জন নিহত হয়েছে এবং প্রতি ২০ জনের মধ্যে ১ জন আহত হয়েছে।
গভর্নমেন্ট মিডিয়া অফিসের হিসাব অনুযায়ী, গত ৩রা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ৬১,৭০০ জনের বেশি। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে মৃত ধরে নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে চালানো হামলায় ১,১৩৯ জন নিহত হয় এবং ২০০ জনের বেশি বন্দী হয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা