আতঙ্কের ছবি! গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের মানব ঢাল বানাচ্ছে ফিলিস্তিনিদের!

গাজায় ফিলিস্তিনিদের মানব shield হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ, ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ।

তেল আবিব, ইসরায়েল – গাজায় ফিলিস্তিনি নাগরিকদের মানব shield হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে ইসরায়েলি সৈন্যদের বিরুদ্ধে। সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) অনুসন্ধানে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে, যেখানে ঘটনার শিকার ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সদস্যদের বয়ান প্রকাশ করা হয়েছে।

অভিযোগে জানা যায়, ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের বোমা ও বন্দুকধারীদের খোঁজে বিভিন্ন বাড়িতে পাঠাতো। তাদের হুমকি দেওয়া হতো, এই কাজ না করলে জীবনহানির সম্ভবনা রয়েছে। এ ধরনের কাজে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্যও, যাদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অফিসার জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশেই অনেক সময় এমনটা করা হতো।

এপি’র সঙ্গে কথা হয় এমন সাতজন ফিলিস্তিনি নাগরিকের, যাদের গাজা এবং পশ্চিম তীরে মানব shield হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের একজন, আইমান আবু হামাদান জানান, গত গ্রীষ্মে তাকে ইসরায়েলি সেনারা প্রায় আড়াই সপ্তাহ ধরে আটকে রেখেছিল এবং বাড়ির ভেতরে বিস্ফোরক আছে কিনা, তা পরীক্ষা করার জন্য ব্যবহার করত। সেনারা তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকত, আর তিনি সব ঘর এবং সুড়ঙ্গ খুঁটিয়ে দেখতেন। কাজ শেষে সেনারা ঘরগুলো ধ্বংস করে দিত।

আরেকজন ফিলিস্তিনি, মাসুদ আবু সাঈদ জানান, মার্চ মাসের ঘটনা এটি। খান ইউনিসে তাকে দুই সপ্তাহ ধরে মানব shield হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি সৈন্যদের বলেছিলাম, এটা খুবই বিপদজনক। আমার সন্তান আছে, তাদের কাছে ফিরতে চাই।’

শুধু গাজাই নয়, পশ্চিম তীরেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। হাজর এস্তিতি নামের এক নারীর ভাষ্য অনুযায়ী, সৈন্যদের নির্দেশে তাকে জেনিন শরণার্থী শিবিরের কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে ভিডিও করতে এবং তল্লাশি চালাতে বাধ্য করা হয়।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, তারা বেসামরিক নাগরিকদের মানব shield হিসেবে ব্যবহার করার কঠোর বিরোধী। তবে, তারা কিছু ঘটনার তদন্ত করছে বলেও জানিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই ধরনের ঘটনা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধের শামিল।

ইসরায়েলের সাবেক সেনা সদস্য নাদাভ উইম্যান বলেন, ‘হামাস বেসামরিক নাগরিকদের মানব shield হিসেবে ব্যবহার করে, ইসরায়েল সব সময় এর নিন্দা জানায়। কিন্তু আমাদের সেনারাও একই কাজ করছে বলে শোনা যাচ্ছে।’

অভিযোগ উঠেছে, সেনাদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হয়েছিল যে মানব shield ব্যবহার করা খুবই সহজ এবং কার্যকর। এক সেনা কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, যুদ্ধের শুরুতে এই ধারণা দ্রুত ছড়িয়ে পরেছিল এবং প্রায় সব ইউনিটই ফিলিস্তিনিদের ব্যবহার করত।

আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ মাইকেল স্মিথ বলেন, ‘যখন সেনারা দেখছে তাদের প্রতিপক্ষ বিতর্কিত কাজ করছে, তখন তাদের নিজেদের আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করা কঠিন।’

যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *