গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যে এক ইসরায়েলি জিম্মির দেহাবশেষ সনাক্ত করা হয়েছে। শনিবার ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামাসের হাতে বন্দী হওয়া এলিয়াহু মার্গালিট নামের এক ব্যক্তির দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে।
গত ৭ই অক্টোবর ২০২৩ তারিখে হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ চালালে তিনি অপহৃত হন। ৭৬ বছর বয়সী মার্গালিট কিবুতজ নির ওজের একটি ঘোড়ার আস্তাবলে কাজ করতেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় শনিবার জানায়, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের পরীক্ষার পর মার্গালিটের মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে এবং তার পরিবারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ১০ জন জিম্মির মরদেহ ফেরত পাওয়া গেছে।
এর আগে হামাস আরও একটি মরদেহ হস্তান্তর করেছে, তবে সেটি কোনো জিম্মির ছিল না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, হামাস যদি চুক্তির শর্ত মেনে জিম্মিদের সকলের মরদেহ ফেরত না দেয়, তাহলে তিনি ইসরায়েলকে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার অনুমতি দেবেন।
এদিকে, জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের সমর্থনকারী একটি ফোরাম এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মার্গালিটের মরদেহ ফেরত আসায় পরিবার কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। তবে, এখনো পর্যন্ত ১৮ জন জিম্মিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, যতক্ষণ না তাদের সবাইকে ফিরিয়ে আনা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
ফোরামটি নিয়মিত সাপ্তাহিক সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনপুষ্ট এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রধান শর্তগুলোর মধ্যে জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দেওয়া, গাজায় ত্রাণ সরবরাহ, গাজায় প্রবেশপথ খোলা এবং পুনর্গঠন অন্যতম। গাজায় দুই বছরের ভয়াবহ যুদ্ধের অবসানে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তাবলী মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তাদের মধ্যে মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়টিও রয়েছে। তবে, ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপকতা এবং অবিস্ফোরিত অস্ত্রের উপস্থিতির কারণে মরদেহ উদ্ধারের কাজটি কঠিন হয়ে পড়েছে।
হামাস মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছে, কিছু মরদেহ ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় রয়েছে।
মার্গালিটের মরদেহ খান ইউনিসে পাওয়া গেছে, যেখানে দুটি বুলডোজার মাটি খুঁড়ে অনুসন্ধান চালিয়েছিল।
অন্যদিকে, হামাস মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বাড়ানো, মিশরের সঙ্গে রাফা সীমান্ত ক্রসিং দ্রুত খোলা এবং ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের পুনর্গঠন শুরুর আহ্বান জানিয়েছে।
ত্রাণ সরবরাহের ক্ষেত্রে এখনো অনেক বাধা রয়েছে। সীমান্ত ক্রসিংগুলো বন্ধ থাকার কারণে এবং ত্রাণ বিতরণকারী সংস্থাগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞার ফলে ত্রাণ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে গাজায় বিতরণের জন্য এখন পর্যন্ত ৩৩৯টি ট্রাক থেকে ত্রাণ সামগ্রী নামানো হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় ৬০০টি মানবিক সহায়তা ট্রাক প্রবেশের কথা।
গাজায় ত্রাণ বিষয়ক ইসরায়েলি সংস্থা কোগাত (COGAT) জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ৯৫০টি ট্রাক – যার মধ্যে বাণিজ্যিক ট্রাক ও দ্বিপাক্ষিক সহায়তা অন্তর্ভুক্ত ছিল – প্রবেশ করেছে, এবং বুধবার ৭১৬টি ট্রাক প্রবেশ করেছে।
গাজার ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষ ইসরায়েলের আক্রমণ থেকে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় থেকে মুক্তি পেতে যুদ্ধবিরতির দিকে তাকিয়ে আছে। যুদ্ধের সময় ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেয়, এমনকি কিছু সময়ের জন্য তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়।
গাজা সিটিতে দুর্ভিক্ষের ঘোষণা করা হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অপুষ্টির কারণে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা ৪০০ জনের বেশি, যাদের মধ্যে ১০০ জনের বেশি শিশু রয়েছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করেছে এবং হামাস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তা চুরির অভিযোগ করেছে। তবে জাতিসংঘ ও অন্যান্য ত্রাণ সংস্থা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ৬৮,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে, যা হামাস-শাসিত কর্তৃপক্ষের অংশ। জাতিসংঘ এবং অনেক স্বাধীন বিশেষজ্ঞ এই সংখ্যাকে নির্ভরযোগ্য হিসেবে মনে করে।
ইসরায়েল তাদের নিজস্ব হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ না করে এই হিসাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে।
রেড ক্রসের মতে, আরও হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস