ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ, কাতার জুড়ে উত্তেজনা!

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে, যার ফলে উভয় দেশই একে অপরের উপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে।

বৃহস্পতিবার ভোরে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র দক্ষিণ ইসরায়েলের একটি প্রধান হাসপাতালে আঘাত হানে, এতে ব্যাপক ক্ষতি হলেও গুরুতর হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। একইসাথে, তেল আবিবের একটি বহুতল ভবনেও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে।

ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ২৪০ জন আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে এই হামলার জন্য দায়ী করেছেন এবং বলেছেন, সামরিক বাহিনী ‘তার (খামেনির) অস্তিত্বের অবসান চায়’।

অন্যদিকে, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর আঘাত হেনেছে। দেশটির আড়াক ভারী জল প্রকল্পে হামলা চালানো হয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, হামলায় কোনো তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়নি এবং আক্রমণের আগেই সেখানকার কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মাল্টিপল ওয়ারহেড (একাধিক যুদ্ধাস্ত্র) ব্যবহার করেছে, যা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

এর ফলে, আয়রন ডোম-এর মতো বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর পক্ষে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়বে।

এদিকে, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা ইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বিশেষ করে সেখানে কর্মরত রুশ কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, বুশেহরে দুটি নতুন পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণে প্রায় ২০০ জনের বেশি রুশ কর্মী কাজ করছেন। তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে কথা বলেছেন।

অন্যদিকে, ইসরায়েলি এক সামরিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ইরান এ পর্যন্ত ইসরায়েলের দিকে প্রায় ৪৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ১,০০০ ড্রোন নিক্ষেপ করেছে।

এর মধ্যে বেশিরভাগ ড্রোন ইরান থেকে এবং কিছু ড্রোন ইরাক থেকে ছোড়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ইসরায়েল তেহরান ও তার আশেপাশের এলাকাগুলোতে আক্রমণের আগে পশ্চিম ইরানে অভিযান শুরু করে।

তবে, যুক্তরাষ্ট্রের ফোরদো পারমাণবিক জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা, সে বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

গাজায় মানবিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালগুলোতে ৬৯ জনের মৃতদেহ ও ২২১ জন আহত ব্যক্তিকে আনা হয়েছে। গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৫৫,৭০০ এবং আহত হয়েছেন ১,৩০,১০১ জন।

হতাহতদের মধ্যে কতজন বেসামরিক নাগরিক বা যোদ্ধা, তা স্পষ্ট নয়।

ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ব্যবস্থার দুই-তৃতীয়াংশ ধ্বংস করে দিয়েছে।

তবে, তাদের হাতে এখনও ১০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার সক্রিয় রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা সামরিক কারখানা থেকে শুরু করে লঞ্চার পর্যন্ত—উৎপাদনের প্রতিটি পর্যায়ে আঘাত হানছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে এই সংঘাত বন্ধের জন্য উদ্বেগ বাড়ছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইসরায়েল ও ইরানের প্রতি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই সংঘাত বাড়লে কেবল ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষগুলোই নয়, বরং আঞ্চলিক দেশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইসরায়েলি হামলার নিন্দা করেছেন।

ইরানের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সরাসরি এই সংঘাতে জড়িত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ এই অঞ্চলে সংঘাত বাড়িয়ে দেবে এবং এর ফল হবে ভয়াবহ’।

ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নয়েল বারোত বলেছেন, ফ্রান্স ও ইউরোপীয় অংশীদাররা ইরানের সঙ্গে আলোচনা পুনরায় শুরু করতে প্রস্তুত।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্বাস আরাকচি জেনেভায় ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানা গেছে।

আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) নিশ্চিত করেছে, ইরানের আড়াক ভারী জল গবেষণা চুল্লিতে আঘাত হানা হয়েছে।

তবে, হামলার সময় চুল্লিতে কোনো পারমাণবিক উপাদান ছিল না, তাই কোনো তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর ঝুঁকি নেই।

সংঘাতের কারণে বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের ইরান ও ইসরায়েল থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জাপান, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও ওমান তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিতে সাহায্য করার কথা জানিয়েছে।

গাজা উপত্যকায় খাদ্য বিতরণের একটি স্থানে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে আটজন নিহত ও ৬০ জন আহত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে লেবাননের হিজবুল্লাহকে ইরানকে সামরিক সহায়তা না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।

তথ্য সূত্র:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *