ইসরায়েলে অভিবাসন: ৭ই অক্টোবর ঘটনার পর পরিবর্তন।
গত ৭ই অক্টোবর সংঘটিত হামাস-এর আক্রমণের পর, বিশ্বে বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী ইহুদিদের মধ্যে ইসরায়েলে অভিবাসন নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। একদিকে যেমন অনেকে এই ঘটনার পর ইসরায়েলে আশ্রয় খুঁজছেন, তেমনই অনেকে আবার সেখানকার অস্থির পরিস্থিতি ও অনিশ্চয়তার কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
এই অভিবাসন প্রবাহের একটি বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
লন্ডন থেকে চানতাল ও নিকি ইয়ং দম্পতি তাদের পরিবারের সঙ্গে ইসরায়েলে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য নভেম্বরের শেষে তেল আভিভে পৌঁছান। তাদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে নাথানিয়েল নামক এক যুবক, যিনি হামাসের হামলায় নিহত হয়েছিলেন, তিনিই ছিলেন তাদের ইসরায়েলে যাওয়ার স্বপ্নের মূল অনুপ্রেরণা।
নাথানিয়েল দুই বছর আগে আলিয়াহ (ইহুদিদের ইসরায়েলে অভিবাসন) করেছিলেন এবং গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কাজ করতেন। চানতাল জানান, নাথানিয়েলের স্বপ্ন ছিল তাদের ইসরায়েলে নিয়ে আসা।
তবে, এই ঘটনার পর শুধু যে ইহুদিরা ইসরায়েলের দিকে যাচ্ছেন, তা নয়। অনেক ইসরায়েলিও দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও, যেমন সাইপ্রাস, কানাডা অথবা থাইল্যান্ডে পাড়ি জমাচ্ছেন। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, চলমান সংঘাত, অর্থনৈতিক সংকট এবং সমাজের ক্রমবর্ধমান বিভাজন।
জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সার্জিও ডেলাপারগোলা-র মতে, ৭ই অক্টোবরের ঘটনার পর অভিবাসনের ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন এসেছে। ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর (CBS) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রায় ৮০,০০০ ইসরায়েলি দেশ ছেড়েছেন।
এদের মধ্যে অক্টোবর মাসেই ১৫,০০০ জন দেশ ত্যাগ করেন। একই সময়ে প্রায় ৩০,০০০ নতুন অভিবাসী ইসরায়েলে আসেন।
সবমিলিয়ে, প্রায় ২৫,০০০ মানুষের একটি ঘাটতি দেখা যায়।
যদিও এই সংখ্যাগুলো খুব বড় নাও হতে পারে, তবে ইসরায়েলের জনসংখ্যা এক কোটির সামান্য বেশি, যার মধ্যে প্রায় ৭২ লক্ষ ইহুদি।
অন্যদিকে, টেক্সাসে বসবাসকারী ইয়োখেভেদ রুটেনবার্গ ৭ই অক্টোবরের ঘটনার পর দ্রুত ইসরায়েলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জানান, তিনি আর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছিলেন না।
তিনি ঘটনার দুই সপ্তাহ পরেই ইসরায়েলে যান এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করেন। বর্তমানে তিনি তেল আভিভে বসবাস করেন এবং একটি স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা চালান, যেখানে প্রায় ৪৫,০০০ সদস্য ইসরায়েলে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে যুক্ত।
এছাড়াও, বিভিন্ন দেশে ইহুদিবিদ্বেষের (antisemitism) কারণে অনেকে ইসরায়েলে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন। জার্মানির মিরনা ফাঙ্ক, যিনি একজন সাংবাদিক ও লেখিকা, অক্টোবর মাসের ঘটনার দুই মাস পর তার মেয়ের সাথে আলিয়াহ করার সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি জানান, জার্মানিতে ইহুদিবিদ্বেষ অনেক বেড়ে যাওয়ায় তিনি নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করছিলেন।
অধ্যাপক ডেলাপারগোলা মনে করেন, এই পরিস্থিতি খুবই জটিল। তিনি উল্লেখ করেন যে, ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও বিভিন্ন সামাজিক বিভাজন বিদ্যমান ছিল, যা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের নীতির বিরুদ্ধে হওয়া বিক্ষোভের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
ইসরায়েলের অভিবাসন নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থার প্রধান ইগাল পালমোর বলেন, “লোকেরা বিভিন্ন কারণে ইসরায়েলে আসে। এর মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ একটি কারণ, তবে এটিই একমাত্র কারণ নয়।”
সবশেষে, ডেলাপারগোলা মনে করেন, বিশ্বজুড়ে ইহুদিরা এক ধরনের অনিশ্চয়তা অনুভব করছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন