ইসরায়েল সিরিয়ায় সামরিক অভিযান জোরদার করেছে, বিমান হামলা ও স্থল অভিযানের ফলে উত্তেজনা বৃদ্ধি। সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান আরও তীব্র করেছে ইসরায়েল।
দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলার পাশাপাশি চালানো হয়েছে স্থল অভিযান। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানার (SANA) খবর অনুযায়ী, বুধবার রাতে দেরায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছে।
তাদের মতে, সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর এই অঞ্চলে ইসরায়েলি সৈন্যদের অভিযান ছিল সবচেয়ে গভীর।
বৃহস্পতিবার সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, রাতের বেলার হামলা ছিল ‘অন্যায়ভাবে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী’। তারা একে ‘সিরিয়াকে অস্থিতিশীল করার এবং সেখানকার জনগণের দুর্দশা বাড়ানোর’ একটি ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বৃহস্পতিবার জানান, তারা তাসিল এলাকার সশস্ত্র বন্দুকধারীদের কাছ থেকে আক্রমণের জবাব দিচ্ছিল এবং তাদের ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ ধ্বংস করেছে।
মুখপাত্র আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী সিরিয়ায় কোনো সামরিক হুমকি সহ্য করবে না এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
তাসিল এলাকার বাসিন্দারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সৈন্যদের একটি দল সেখানে এসে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর একটি পুরনো ঘাঁটি ধ্বংস করার সময় তাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে কয়েকজন সশস্ত্র স্থানীয় লোক নিহত হয়েছে।
সিরিয়ার জন্য জাতিসংঘের বিশেষ দূত গেইর পেডারসেন ইসরায়েলের ‘বারবার এবং তীব্র সামরিক অভিযান’-এর নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ‘সিরিয়া এবং এই অঞ্চলের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা’কে দুর্বল করে দেয়।
তিনি ইসরায়েলকে ‘এই ধরনের হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানান, যা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন হতে পারে’।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (SOHR)-এর তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দেরিতে দামেস্কের কাছে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান দুটি হামলা চালিয়েছে। তবে এতে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
ডিসেম্বরে বিদ্রোহী সেনাদের ক্ষমতা দখলের পর বুধবার ইসরায়েল সিরিয়ার ওপর তীব্র বিমান হামলা চালায়। সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বুধবার রাতে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে ইসরায়েল পাঁচটি পৃথক স্থানে আঘাত হানে।
এতে হামা বিমানঘাঁটি প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় এবং বহু বেসামরিক ও সেনা সদস্য আহত হয়।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা হামা ও হোমসের বিমান ঘাঁটিতে অবশিষ্ট সামরিক সক্ষমতা এবং দামেস্ক এলাকার সামরিক অবকাঠামোতে আঘাত হেনেছে।
সিরিয়ার গণমাধ্যম ও কর্মকর্তাদের মতে, একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রের কাছেও হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ বলেন, এই হামলা ছিল ‘ভবিষ্যতের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা এবং সতর্কবার্তা—আমরা ইসরায়েল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে দেব না’।
নতুন সিরিয়ায় তুরস্কের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সার তুরস্ককে সিরিয়া, লেবানন এবং অন্যান্য অঞ্চলে ‘নেতিবাচক ভূমিকা’ পালনের জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
তিনি প্যারিসে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘তারা সিরিয়াকে একটি তুর্কি আশ্রিত রাজ্য বানানোর জন্য তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। এটা তাদের উদ্দেশ্য, তা স্পষ্ট।’
এ বিষয়ে তুরস্কের কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বিদ্রোহীদের ক্ষমতা দখলের পর থেকে ইসরায়েল সিরিয়ার সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেন, দক্ষিণ সিরিয়াকে সম্পূর্ণভাবে ডিমিলিটারাইজ করতে হবে এবং তিনি তাঁর সরকার ইসরায়েলি সীমান্তের কাছে নতুন সরকারের কোনো বাহিনীর উপস্থিতি মেনে নেবে না।
ডিসেম্বরে নেতানিয়াহু জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে থাকা বাফার জোনে সৈন্য পাঠানোর নির্দেশ দেন, যা গোলান মালভূমিতে ১৯৪৪ সালের যুদ্ধবিরতি রেখা বরাবর ইসরায়েলি ও সিরীয় বাহিনীকে পৃথক করে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা