লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় ধরনের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (স্থানীয় সময়) ইসরায়েলে রকেট হামলার প্রতিক্রিয়ায় লেবাননে পাল্টা আঘাত হানে ইসরায়েল।
এতে একজন শিশুসহ অন্তত ২ জন নিহত হয়েছে। প্রায় চার মাস আগে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটল।
লেবানন থেকে ছোড়া রকেটগুলো ছিল ডিসেম্বরের পর দ্বিতীয় হামলা। এর ফলে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
হিজবুল্লাহ এক বিবৃতিতে হামলার দায় অস্বীকার করে জানায়, তারা যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা উত্তর ইসরায়েলে হামলার ‘জবাব দেবে কঠোরভাবে’। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, তাদের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মেটুলা শহরকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছিল।
ইসরায়েলের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ছয়টি রকেট ছোড়া হয়েছিল, যার মধ্যে তিনটি ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করে এবং সেগুলোকে প্রতিহত করা হয়।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, কোন গোষ্ঠী রকেটগুলো ছুড়েছে, তা নিশ্চিত করতে পারেনি ইসরায়েল। তবে সামরিক বাহিনী দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হেনেছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দক্ষিণের তৌলাইন গ্রামে ইসরায়েলি হামলায় ২ জন নিহত এবং আটজন আহত হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, তারা সেনাবাহিনীকে লেবাননের কয়েক ডজন লক্ষ্যবস্তুতে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ইসরায়েল তার নাগরিকদের কোনো ক্ষতি হতে দেবে না।” ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা হিজবুল্লাহর ঘাঁটি ও কমান্ড সেন্টারে হামলা চালিয়েছে, যেখানে সংগঠনটি কার্যক্রম চালাচ্ছিল।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাওয়াজ সালাম এক বিবৃতিতে লেবাননের সামরিক বাহিনীকে দক্ষিণাঞ্চলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তিনি বলেছেন, তার দেশ আর যুদ্ধ চায় না।
উল্লেখ্য, হামাস ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর হিজবুল্লাহ ইসরায়েলে রকেট, ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে।
এরপর ইসরায়েলও ব্যাপক বিমান হামলা ও হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাদের হত্যা করে। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যায়।
এই সংঘর্ষে লেবাননে ৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয় এবং প্রায় ৬০ হাজার ইসরায়েলি বাস্তুচ্যুত হয়।
নভেম্বরের ২৭ তারিখে হওয়া যুদ্ধবিরতি অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনীকে জানুয়ারির শেষ নাগাদ লেবাননের সব অঞ্চল থেকে সরে যাওয়ার কথা ছিল।
সেই সময়সীমা ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল।
কিন্তু ইসরায়েল এখনো লেবাননের পাঁচটি স্থানে অবস্থান করছে।
তারা উত্তর ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ডজন খানেক বিমান হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা হিজবুল্লাহর ওপর হামলা চালিয়েছে।
একইসঙ্গে ড্রোন হামলাও অব্যাহত রেখেছে, যাতে হিজবুল্লাহর বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হয়েছে।
লেবানন জাতিসংঘকে ইসরায়েলকে সম্পূর্ণভাবে দেশ থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে বলেছে।
জাতিসংঘের অন্তর্বর্তীকালীন বাহিনী (ইউএনআইএফআইএল) সহিংসতার এই সম্ভাব্য বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে শান্তি রক্ষার জন্য উভয় পক্ষকে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
অন্যদিকে, গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাস জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তারা গাজায় ‘ক্রমবর্ধমান তীব্রতা’ নিয়ে অভিযান চালাবে।
হামাসের হাতে এখনো ৫৯ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শুক্রবার রাতের হামলায় গাজা শহরের একটি বাড়িতে অন্তত ৯ জন নিহত হয়, যাদের মধ্যে তিনজন শিশু ছিল।
আহতদের মধ্যে ছিলেন সামেহ আল-মাশরাউয়ি। তিনি জানান, হামলায় তার ভাই নিহত হয়েছে।
একইসঙ্গে নিহত হয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরাও।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী শুক্রবার জানায়, তারা গাজা শহরের পশ্চিমে তিনটি পাড়ায় নতুন করে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে এবং সেখানকার বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে সতর্কবার্তা দিয়েছে।
ইসরায়েল পুনরায় যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে প্রায় ৬০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
ইসরায়েল গাজার প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনির জন্য খাদ্য, জ্বালানি ও মানবিক সহায়তা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে, যাতে হামাসকে যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য চাপ দেওয়া যায়।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলের এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
২০২৩ সালের শুরুতে হামাস-নেতৃত্বাধীন জঙ্গিদের হামলায় ১,২০০ জন নিহত হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই ছিল বেসামরিক নাগরিক।
ওই সময় ২৫১ জন জিম্মিকে আটক করা হয়েছিল। যুদ্ধবিরতি চুক্তি বা অন্যান্য আলোচনার মাধ্যমে অধিকাংশ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী জীবিত আটজন জিম্মিকে উদ্ধার করেছে এবং আরও কয়েকজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় ৪৯,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে কতজন জঙ্গি, সে বিষয়ে তারা কিছু জানায়নি।
তবে তাদের দাবি, নিহতদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। ইসরায়েল বলছে, তারা প্রায় ২০,০০০ জঙ্গি হত্যা করেছে, তবে এর কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস