ইসরায়েলের পার্লামেন্টে সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজেট পাশ হয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আরও সুসংহত করেছে।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) এই বাজেট অনুমোদনের ফলে সরকার পতনের শঙ্কা আপাতত দূর হয়েছে।
বাজেট পাশের এই প্রক্রিয়াটি নেতানিয়াহুর জোটের জন্য ছিল একটি অগ্নিপরীক্ষা।
কারণ, এই জোটে রয়েছে চরম জাতীয়তাবাদী এবং কট্টরপন্থী দলগুলো।
বাজেট পাসের বিনিময়ে তারা তাদের সমর্থকদের জন্য বড় ধরনের বরাদ্দ চেয়েছিল এবং সেই অনুযায়ী অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
যদি ৩১শে মার্চের মধ্যে বাজেট পাশ না হতো, তাহলে নতুন নির্বাচনের সম্ভবনা দেখা দিত, যা নেতানিয়াহুর ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে চলা শাসনের জন্য একটা বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতো।
তবে, বিরোধীরা এই বাজেট নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন।
তাদের অভিযোগ, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি।
তাদের মতে, নেতানিয়াহু দেশের বৃহত্তর স্বার্থের পরিবর্তে, জোট টিকিয়ে রাখার জন্য নিজের রাজনৈতিক মিত্রদের প্রতি বেশি মনোযোগ দিয়েছেন।
বিরোধী দলের নেতা ইয়ার ল্যাপিড একে ‘দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চুরি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, গাজায় যুদ্ধ করা রিজার্ভ সেনা সদস্যসহ মধ্যবিত্ত শ্রেণি এই জোটের স্বার্থে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অন্যদিকে, অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ, যিনি নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত, এই বাজেটকে ‘ফ্রন্ট এবং দেশের ভেতরের পরিস্থিতি, উভয় ক্ষেত্রেই বিজয়ী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
বাজেট পাশ হওয়ায় এখন নেতানিয়াহুর সরকার অক্টোবর ২০২৬ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সম্ভাবনা বেড়েছে, যা ইসরায়েলের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি বিরল ঘটনা।
গাজায় যুদ্ধ পুনরায় শুরু করা এবং হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে, এমন পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহুর জন্য এটি রাজনৈতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ জয়।
এমনকি, সরকার শীর্ষস্থানীয় আইন ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটিরও সমালোচনা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এখন নেতানিয়াহুর হাতে হামাসের সঙ্গে একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার সুযোগ আসতে পারে।
তবে, জোটসঙ্গীরা যেহেতু যুদ্ধের পক্ষে, তাই তাদের দুর্বল হয়ে পড়া সমর্থন টিকিয়ে রাখতে নেতানিয়াহু হয়তো তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে আরও বেশি মনোযোগ দেবেন।
অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এবং গাজায় যুদ্ধ নিয়ে বিক্ষোভ চলছে।
বিক্ষোভকারীরা গাজায় এখনও বন্দী থাকা ৫৯ জন জিম্মির মুক্তি নিয়েও উদ্বিগ্ন।
বিক্ষোভের সময়, নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করার চেষ্টা এবং ‘গভীর রাষ্ট্র’-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অভিযোগও উঠেছে।
বাজেট পাশের আগে, সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টের বাইরে জড়ো হয় এবং পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস