ইসরায়েলের পরমাণু অস্ত্র: রহস্যের জাল ছিঁড়ে বিস্ফোরক তথ্য!

শিরোনাম: ইরানের পরমাণু কর্মসূচি: ইসরায়েলের রহস্য আর আন্তর্জাতিক দ্বিচারিতা

মধ্যপ্রাচ্যে পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়, যেখানে উত্তেজনা লেগেই আছে। আর এই অঞ্চলে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে।

ইসরায়েল নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্র ভাণ্ডার নিয়ে এখনো নীরব, কিন্তু তারা প্রতিবেশী ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে মনে করে।

ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে না যে তাদের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র আছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলে দীর্ঘদিন ধরে এমনটাই ধারণা করা হয়।

তাদের এই নীরবতা কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মাধ্যমে তারা ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়, আবার কোনো পারমাণবিক প্রতিযোগিতা বা আক্রমণেরও শিকার হয় না।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা প্রায়ই পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বিচারিতার সমালোচনা করেন। ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে তারা কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করে, অথচ ইসরায়েলের সম্ভাব্য অস্ত্র ভাণ্ডারকে কার্যত উপেক্ষা করা হয়।

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, যা ইসরায়েলের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংসের প্রচেষ্টাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে।

১৯৫৮ সালে ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়নের আমলে নেগেভ নিউক্লিয়ার রিসার্চ সেন্টার, দিমুনা খোলা হয়। সে সময় প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না থাকায়, ইসরায়েল নিজেদের নিরাপত্তার জন্য পারমাণবিক অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।

পরবর্তীতে, ১৯৭০-এর দশকে ইসরায়েল পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে সক্ষম হয়।

তবে ১৯৮৬ সালে, দিমুনা কেন্দ্রের এক প্রাক্তন টেকনিশিয়ান মোর্দেচাই ভানুনি-র মাধ্যমে ইসরায়েলের পারমাণবিক কার্যক্রমের গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। তিনি সেখানকার ছবি ও বিস্তারিত তথ্য লন্ডনের ‘দ্য সানডে টাইমস’ পত্রিকায় প্রকাশ করেন।

এর ফলস্বরূপ, ভানুনিকে ১৮ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। বর্তমানে তিনি ইসরায়েল ছাড়তে পারেন না এবং বিদেশি কারও সঙ্গে দেখা করার অনুমতিও তার নেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরায়েলের কাছে ৮০ থেকে ২০০টির মতো পারমাণবিক বোমা রয়েছে। তাদের কাছে ১,১১০ কিলোগ্রাম প্লুটোনিয়াম মজুদ আছে, যা দিয়ে ২৭৭টি বোমা তৈরি করা সম্ভব।

এছাড়া, তাদের ছয়টি সাবমেরিন রয়েছে, যেগুলি পারমাণবিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে সক্ষম। এই সাবমেরিনগুলো জার্মানি সরবরাহ করেছে এবং হাইফা শহরে সেগুলি নোঙ্গর করা আছে।

মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং অধ্যাপক অর রবিনোভিচ বলেছেন, ‘যখন কোনো পারমাণবিক শক্তিধর দেশ যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তখন পুরো বিশ্ব উদ্বেগে পরে যায়।’

ইসরায়েলের সামরিক নেতারা সম্ভবত চরম পরিস্থিতিতে, যেমন তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধ্বংসের কোনো অস্ত্র ব্যবহার করা হলে, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা বিবেচনা করতে পারে।

বর্তমানে, ভারতের মতো আরও কয়েকটি দেশ পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (Non-Proliferation Treaty) স্বাক্ষর করেনি। উত্তর কোরিয়া চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে।

যদিও ইরান এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, কিন্তু জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা গত সপ্তাহে ইরানের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশ্লেষক সুসি স্নাইডারের মতে, ইসরায়েলের এই রহস্যের নীতি তাদের বৃহত্তর আন্তর্জাতিক নজরদারি এড়িয়ে যেতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে, এটি পশ্চিমা দেশগুলোর দুর্বলতাকেও প্রকাশ করে, যারা মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *