ফিলিস্তিনের উদ্বাস্তু শিশুদের জন্য পরিচালিত জাতিসংঘের (UN) ছয়টি স্কুল বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। এর ফলে পূর্ব জেরুজালেমের প্রায় আটশ’ শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন হুমকির মুখে পড়েছে।
জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা (UNRWA)-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ স্কুলগুলো বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে এবং তাদেরকে ৩০ দিনের মধ্যে এই নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে।
জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরওয়া জানায়, তাদের স্কুলগুলো জাতিসংঘের বিশেষ অধিকার ও সুরক্ষার অধীনে। তাদের মতে, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ জাতিসংঘের নিয়ম-নীতির লঙ্ঘন।
ইসরায়েলের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের অন্য স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করতে অভিভাবকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সহায়তা করতে প্রস্তুত।
জানা যায়, গত অক্টোবরে ইসরায়েলি পার্লামেন্ট একটি আইন পাস করে, যেখানে ইসরায়েলে ইউএনআরওয়ার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া, সংস্থাটিকে সহায়তা করার জন্য ১৯৬৭ সালের চুক্তি বাতিল করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ইসরায়েলের সংসদ সদস্য ইউলিয়া মালিনোভস্কি, যিনি ইউএনআরওয়া নিষিদ্ধ করার বিলের প্রস্তাবক ছিলেন, স্কুল বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, স্কুলগুলোকে আগামী ৮ই মের মধ্যে বন্ধ করতে হবে।
মালিনোভস্কি আরও জানান, ইউএনআরওয়ার অধীনে থাকা অন্যান্য স্থাপনার পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করারও চেষ্টা চলছে।
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই জাতিসংঘের এই সংস্থাটিকে দুর্বল করতে চাইছে। তাদের অভিযোগ, ইউএনআরওয়ার কর্মীরা হামাসের সঙ্গে জড়িত এবং তাদের পাঠ্যক্রমে ইসরায়েল বিরোধী মনোভাব শেখানো হয়।
যদিও জাতিসংঘের একটি তদন্তে দেখা গেছে, পাঠ্যপুস্তকে ইসরায়েল বিরোধী কিছু উদাহরণ পাওয়া গেলেও, তা ছিল নগণ্য এবং নিরপেক্ষতার গুরুতর লঙ্ঘন।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) অভিযোগ করেছে, গাজায় ইউএনআরওয়ার ১৩ হাজার কর্মীর মধ্যে কয়েকজন গত ৭ই অক্টোবর হামলায় জড়িত ছিল। তবে ইউএনআরওয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, ‘পুরো সংস্থার’ বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলার কোনো ভিত্তি নেই।
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর বাস্তুচ্যুত হওয়া ফিলিস্তিনিদের সহায়তার জন্য জাতিসংঘের এই সংস্থাটি গঠিত হয়। ফিলিস্তিনিরা এই ঘটনাকে ‘নাকবা’ বা বিপর্যয়ের সূচনা হিসেবে দেখে।
শুরুতে প্রায় সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থীর জন্য কাজ শুরু করা ইউএনআরওয়া বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ৫৯ লাখ মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাস করে।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের ভয়াবহ যুদ্ধের কারণে ইউএনআরওয়া প্রায় ১৭ লাখ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুকে সহায়তা করছে। এছাড়া, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে সংস্থাটি প্রায় আট লাখ ৭১ হাজার ৫০০ জন উদ্বাস্তুকে সাহায্য করে থাকে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন