ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে অবস্থিত সেবাস্টিয়া শহরে ইসরায়েলের একটি নতুন জাতীয় উদ্যান নির্মাণের পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বাড়ছে। ফিলিস্তিনিরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে তাদের এলাকা দখলের চেষ্টা চলছে এবং তাদের ইতিহাস মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েল এটিকে তাদের ঐতিহ্য রক্ষার অংশ হিসেবে দেখছে।
প্রাচীন এই শহরটিতে একসময় ইহুদি, বাইজেন্টাইন এবং ক্রুসেডারদের বসতি ছিল। বর্তমানে এখানে বসবাস করা ফিলিস্তিনিরা বলছেন, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ তাদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করার একটি কৌশল।
ইসরায়েলের মন্ত্রীরা সম্প্রতি সেবাস্টিয়া সফর করেছেন এবং সেখানে খনন কাজ শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন।
স্থানীয় মেয়র মোহাম্মদ আজিমের মতে, এই উদ্যান নির্মাণের ফলে ফিলিস্তিনিদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে এবং তারা একসময় এলাকা ছাড়তে বাধ্য হবে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, নতুন সামরিক স্থাপনা তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হতে পারে, যা বাসিন্দাদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
মেয়রের দাবি, এখানে সেনাদের আনাগোনা বেড়েছে এবং তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো ফিলিস্তিনিদের এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা।
ঐতিহাসিক সেবাস্টিয়া শহরে বাইজেন্টাইন বেসিলিকা, একটি রোমান ফোরাম এবং ক্রুসেডারদের তৈরি সেন্ট জন চার্চের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। বর্তমানে, এটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকার অন্তর্ভুক্তির জন্য বিবেচিত হচ্ছে।
তবে, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের কারণে স্থানীয়রা তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ওপর আঘাত হানার আশঙ্কা করছেন।
সেবাস্টিয়া আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়ামের তত্ত্বাবধায়ক ওয়ালা গাজ্জাল মনে করেন, ইসরায়েলের এই পরিকল্পনা সেখানকার বাসিন্দাদের বিতাড়িত করার একটি অংশ।
তিনি বলেন, “খুব শীঘ্রই হয়তো আমাদের এখান থেকে চলে যেতে বলা হবে।” গাজ্জাল আরও যোগ করেন, তারা গাজায় এবং পশ্চিম তীরের শরণার্থী শিবিরগুলোতে যা দেখছেন, সেবাস্টিয়াতেও তেমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই জাতীয় উদ্যান নির্মাণের ফলে সেবাস্টিয়া শহরের কোনো ক্ষতি হবে না।
তবে, স্থানীয়রা মনে করেন, এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের ইতিহাসকে অস্বীকার করা হচ্ছে এবং তাদের এলাকা দখলের পথ সুগম করা হচ্ছে।
স্থানীয় একটি কফি শপের মালিক সামের শা’য়ের জানিয়েছেন, এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সামরিক উপস্থিতির কারণে পর্যটকদের সংখ্যা কমে গেছে এবং ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
সেবাস্টিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা ও অ্যাক্টিভিস্ট আহমেদ কায়েদ বলেছেন, তারা তাদের জমি ছাড়তে রাজি নন এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।
তিনি আরও জানান, ইসরায়েল সেবাস্টিয়া দখলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে।
ফিলিস্তিনিরা আশঙ্কা করছেন, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে দেবে।
তারা চান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুক এবং তাদের অধিকার রক্ষা করুক।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা