গাজা দখলের পরিকল্পনা ইসরায়েলের, বাড়ছে মানবিক বিপর্যয়?

গাজায় ইসরায়েলের সর্বাত্মক অভিযান পরিকল্পনার অনুমোদন, বাড়ছে মানবিক সংকট।

তেল আবিব, ইসরায়েল – গাজা উপত্যকা সম্পূর্ণভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা। সোমবার ভোরে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই ইসরায়েলি কর্মকর্তা।

এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে হামাসকে পরাজিত করা এবং গাজায় আটক জিম্মিদের উদ্ধারের লক্ষ্যে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান আরও ব্যাপক রূপ নেবে, যা আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিতে পারে।

নতুন পরিকল্পনায় গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা ইতোমধ্যে মানবিক সংকটে জর্জরিত এই অঞ্চলের পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলবে। ইসরায়েলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে তারা ধীরে ধীরে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চান।

২০০৫ সালে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর থেকে ইসরায়েল এই অঞ্চলের ওপর অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। যদি তারা আবার গাজা দখল করে নেয়, তাহলে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হয়ে আসবে। একইসঙ্গে, ইসরায়েলের প্রতি চরম বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবাপন্ন একটি জনগোষ্ঠীর ওপর কীভাবে তারা শাসন চালাবে, সেই প্রশ্নও উঠবে।

গত মার্চ মাস থেকে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর ইসরায়েল গাজায় তীব্র আক্রমণ শুরু করে, যাতে শত শত মানুষ নিহত হয়েছে। এরই মধ্যে গাজার প্রায় ৫০ শতাংশ এলাকা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।

যুদ্ধের কারণে গাজার ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং এখানকার অনেক এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের ফলে গাজায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খাদ্য, জ্বালানি ও পানির অভাবে সেখানকার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

জানা গেছে, ইসরায়েল এখন হামাসকে মানবিক সহায়তা বিতরণে বাধা দিতে চাইছে।

খবর অনুযায়ী, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের জন্য সহায়তা বিতরণের দায়িত্বে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা নিয়োগ করতে চাইছে।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে না, কারণ এটি তাদের নীতিমালার পরিপন্থী। জাতিসংঘের মতে, এই পরিকল্পনা জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে একটি চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে কাজ করবে।

অন্যদিকে, জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা এই পদক্ষেপের কারণে তাদের প্রিয়জনদের জীবন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত জিম্মিদের উদ্ধারের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

গাজায় ইসরায়েলের এই অভিযান পরিকল্পনার কারণে সেখানে মানবিক সংকট আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। এছাড়া, গাজায় ইসরায়েলের অভিযান অব্যাহত থাকায় সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ বাড়ছে এবং অনেকেই অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছেন।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *