গাজায় ইসরায়েলের ‘দখল’ পরিকল্পনা! নতুন করে যুদ্ধের প্রস্তুতি?

গাজায় সামরিক অভিযান আরও বড় করার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল, যার মধ্যে পুরো গাজা উপত্যকা ‘দখল’ করারও সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা এরই মধ্যে এই পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে বসবাসকারী ২৩ লক্ষ মানুষের জন্য খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এই অভিযানের অংশ হিসেবে পুরো গাজা উপত্যকা দখলের ইঙ্গিত দিয়েছেন। এমনকি, গাজার বাসিন্দাদের সুরক্ষার জন্য তাদের দক্ষিণাঞ্চলে সরিয়ে নেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখনো ফিলিস্তিনিদের স্বেচ্ছায় গাজা ছাড়ার বিষয়ে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন যোগাচ্ছেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদানের কাজটিও ইসরায়েল নিজেদের হাতে নিতে পারে।

যদিও খাদ্য সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়ার কারণে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সেখানকার মানুষের অনাহারে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বেসরকারি নিরাপত্তা ঠিকাদারদের মাধ্যমে গাজাবাসীর কাছে খাদ্য বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে।

ইসরায়েলি সেনারা সেখানে ‘নিরাপত্তা’র দায়িত্বে থাকবে।

এই পরিকল্পনা নিয়ে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, তাদের লক্ষ্য হলো হামাসকে ‘হ হারিয়ে’ দেওয়া এবং গাজায় আটক জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা।

তবে, জিম্মি ও নিখোঁজ পরিবারের ফোরাম এক বিবৃতিতে বলেছে, এই পরিকল্পনা বর্তমানে গাজায় আটকে থাকা জিম্মিদের ‘বিসর্জন’ দেওয়ার শামিল।

বৈঠকে রাজনৈতিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ দেখা গেছে।

সেনাবাহিনীর প্রধান আইয়াল জামির সতর্ক করে বলেছেন, ব্যাপক সামরিক অভিযান চালালে গাজায় আটক জিম্মিদের ‘হারিয়ে’ যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যদিকে, কট্টর ডানপন্থী নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির গাজায় খাদ্য, পানি, ওষুধ, জ্বালানি ও অন্যান্য সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।

এমনকি, তিনি খাদ্য গুদাম ও জেনারেটরের ওপর বোমা হামলার প্রস্তাবও করেন, যাতে সেখানে কোনো সরবরাহ বা বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকে।

তবে, আইয়াল জামির সতর্ক করে বলেন, এমনটা করলে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হবে এবং ইসরায়েলের জন্য তা ‘বিপজ্জনক’ হবে।

বিরোধী দলের নেতা ইয়ার লাপিদ নেতানিয়াহুর হাজার হাজার রিজার্ভ সেনা ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

তাঁর মতে, প্রধানমন্ত্রী কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ না করেই সেনা সমাবেশ করছেন এবং তাঁদের চাকরির মেয়াদ বাড়াচ্ছেন।

আরেক বিরোধী নেতা ইয়ার গোলান বলেছেন, নেতানিয়াহু কেবল তাঁর সরকার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন, কারণ এই পরিকল্পনার মাধ্যমে নিরাপত্তা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে না এবং জিম্মিদের ফিরিয়ে আনাও সম্ভব হবে না।

জানা গেছে, নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভার একমাত্র সদস্য হিসেবে ইতামার বেন-গভির আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সহায়তা পাঠানোর প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন।

গাজায় সহায়তা বিতরণের জন্য মার্কিন নিরাপত্তা ঠিকাদারদের ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল।

তবে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করছেন, বর্তমানে গাজায় যথেষ্ট খাদ্য মজুত রয়েছে, তাই এই পরিকল্পনা এখনই কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম।

পরিকল্পনায় গাজার দক্ষিণে একটি নতুন ‘মানবিক অঞ্চল’ তৈরির কথাও বলা হয়েছে, যা হবে সহায়তার কেন্দ্র।

জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিম’ (এইচসিটি) জানিয়েছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে এই অঞ্চলের মাধ্যমে সহায়তা পাঠানোর জন্য অনুমতি চেয়েছে।

তবে, এইচসিটি এই ধরনের পরিকল্পনাকে বিপজ্জনক হিসেবে বর্ণনা করেছে।

তাদের মতে, এটি মানবিক নীতিমালার পরিপন্থী এবং সামরিক কৌশল হিসেবে জীবনধারণের উপাদানগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।

উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে খাদ্য বিতরণের জন্য অপেক্ষারত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালালে ১০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়।

একে ‘ফ্লাওয়ার গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, আকাশপথে খাদ্য সরবরাহ করে গাজার ২০ লক্ষ মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়।

এছাড়া, গত মে মাসে গাজায় সহায়তা পাঠানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র একটি ভাসমান জেটি তৈরি করেছিল, যা কয়েক মাস পরই বন্ধ হয়ে যায়।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *