জেরুজালেমে উত্তেজনা: জিম্মিদের মুক্তি চেয়ে বিক্ষোভ, জলকামান ও ধরপাকড়

ইসরায়েলে জিম্মিদের মুক্তি ও গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ, জলকামান ব্যবহার করে ছত্রভঙ্গ করলো পুলিশ।

জেরুজালেম থেকে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে রবিবার (১৭ আগস্ট) হামাস কর্তৃক আটক জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা এক দিনের ধর্মঘট পালন করে রাস্তা অবরোধ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়।

এসময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করে এবং বহু বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে।

বিক্ষোভের মূল কারণ ছিল হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজায় চলমান যুদ্ধ বন্ধ করা। বিক্ষোভকারীরা আশঙ্কা করছেন, গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান চললে জিম্মিদের জীবন আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়েছিল এবং এরপর গাজায় ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় এখন পর্যন্ত ৬১,৯০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি সরকারের প্রতি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন স্থানে সমবেত হয়ে সরকারের কাছে তাদের দাবি তুলে ধরেন।

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেকে নিহত শিশুদের ছবি বহন করছিলেন, যা গাজায় মানবিক সংকটের গভীরতা আরও একবার প্রমাণ করে।

তেল আবিবে এক বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক প্রাক্তন জিম্মি বলেন, “সামরিক শক্তি ব্যবহার করে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা যাবে না। তাদের ফেরানোর একমাত্র উপায় হলো একটি চুক্তি করা।” বিক্ষোভকারীরা আরও জানান, জিম্মিদের মুক্তির জন্য সরকার যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তারা তাদের আন্দোলন আরও জোরালো করবেন।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হামাসের সঙ্গে কোনো ধরনের আপস-আলোচনার বিরোধিতা করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, হামাসকে পরাজিত না করে যুদ্ধ বন্ধ করলে ৭ অক্টোবরের মতো ঘটনা আবার ঘটতে পারে।

নেতানিয়াহু জিম্মিদের মুক্তির জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও, তার জোটের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।

গাজায় মানবিক পরিস্থিতি অত্যন্ত শোচনীয় আকার ধারণ করেছে। সেখানকার হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অপুষ্টির কারণে রবিবার আরও ২ জন শিশু মারা গেছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় খাদ্য ও স্বাস্থ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। একইসঙ্গে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় সাধারণ মানুষ হতাহতের ঘটনাও বাড়ছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘন্টায় অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়ে ৭ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ত্রাণ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় সেখানকার মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, ইসরায়েল সরকার গাজা শহরে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর মধ্যেই তারা গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর বিষয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

যদিও ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, বর্তমানে যে পরিমাণ সহায়তা পাঠানো হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের কর্মকাণ্ড। তারা ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে।

সম্প্রতি ইসরায়েল ইয়েমেনের রাজধানী সানার একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিমান হামলা চালিয়েছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *