গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। হামাস এই প্রস্তাবের কিছু অংশে রাজি হয়েছে জানালেও, এখনো অনেক বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
শনিবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা তাদের নেতাদের নির্দেশে এই পরিকল্পনার প্রথম ধাপ কার্যকর করতে প্রস্তুত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজায় এখন শুধুমাত্র প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে রয়েছে ইসরায়েল এবং তারা কোনো সক্রিয় হামলা চালাচ্ছে না। তবে গাজা উপত্যকা থেকে কোনো সেনা সরানো হয়নি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামাসের এই ঘোষণার পরেই ইসরায়েলকে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। ট্রাম্প হামাসের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, তারা একটি স্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত।”
আগামী মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবরের হামলার দ্বিতীয় বার্ষিকী। তার আগেই যুদ্ধ বন্ধ এবং জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে ট্রাম্পের এই উদ্যোগ।
এই প্রস্তাবের আন্তর্জাতিক সমর্থন রয়েছে এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
শুক্রবার নেতানিয়াহুর দপ্তর জানায়, হামাসের সঙ্গে মতপার্থক্য দূর করার চেষ্টা চলছে এবং ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আন্তর্জাতিক চাপ ও ট্রাম্পের অনুরোধের পরেই নেতানিয়াহু এই পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, মিশরের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জিম্মিদের মুক্তি এবং ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী শত শত ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
তিনি আরও জানান, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য আরব মধ্যস্থতাকারীরা একটি আলোচনা আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
গাজায় দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদও ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
তবে, সবকিছু এখনো অনিশ্চিত।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামাসকে ৪৮ জন জিম্মিকে (যাদের মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত) তিন দিনের মধ্যে মুক্তি দিতে হবে।
তাদের ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে এবং অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল গাজায় আক্রমণ বন্ধ করবে, অধিকাংশ এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে, শত শত ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেবে এবং মানবিক সহায়তা ও পুনর্গঠনের অনুমতি দেবে।
হামাস জিম্মিদের মুক্তি এবং ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি হয়েছে, তবে তাদের মতে, এই পরিকল্পনার অন্যান্য দিক নিয়ে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আরও আলোচনার প্রয়োজন।
তারা এখনো অস্ত্র সমর্পণের বিষয়টি স্পষ্ট করেনি।
অবসরপ্রাপ্ত ইসরায়েলি জেনারেল আমির আভিভি বলেন, জিম্মিদের মুক্তির জন্য ইসরায়েল কয়েক দিনের জন্য হামলা বন্ধ করতে পারে, তবে হামাস অস্ত্র ত্যাগ না করলে তারা আবার অভিযান শুরু করবে।
অন্যদিকে, জেরুজালেম সেন্টার ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ফরেন অ্যাফেয়ার্সের গবেষক ওডেড আইলামের মতে, হামাসের এই ‘হ্যাঁ, কিন্তু’ ধরনের বক্তব্য পুরনো দাবিগুলোকে নতুন মোড়কে উপস্থাপন করছে।
গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের জন্য এর বাস্তব প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়।
গাজার খান ইউনিসের বাসিন্দা সামির আব্দুল-হাদি বলেন, “আমরা এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই। আমরা চাই, এখানে যুদ্ধবিরতি হোক।” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, অতীতের মতো এবারও আলোচনা ভেস্তে যেতে পারে।
ইসরায়েলি বাহিনী এখনো গাজা সিটির ওপর অবরোধ বজায় রেখেছে, যা তাদের সর্বশেষ অভিযানের কেন্দ্রবিন্দু।
শনিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনিদের শহরটিতে ফিরতে নিষেধ করেছে এবং এটিকে “বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র” হিসেবে ঘোষণা করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের প্রধান অভিযান শুরুর আগে গাজা সিটি দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছিল।
কয়েক সপ্তাহে প্রায় ৪ লাখ মানুষ শহর ছেড়ে গেলেও, এখনো সেখানে বহু মানুষ বসবাস করছেন।
জিম্মিদের পরিবারগুলোও সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
ইহুদি কোহেন, যার ছেলে নিমরোদ গাজায় বন্দী, তিনি বলেন, হামাস বা নেতানিয়াহু এই চুক্তি ভেস্তে দিতে পারেন অথবা ট্রাম্পের আগ্রহ কমে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা ট্রাম্পের ওপর আস্থা রাখছি, কারণ তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি এই কাজটি করছেন। আমরা চাই, শেষ পর্যন্ত তিনি আমাদের সঙ্গে থাকুন।”
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।