গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান আবারও জোরদার হয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা এবং বাড়ছে আঞ্চলিক উত্তেজনা।
শুক্রবার ভোরে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছে। স্থানীয় নাসির হাসপাতালের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি এই তথ্য জানিয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, হামাসকে চাপ দেওয়ার উদ্দেশ্যে তারা গাজার উত্তরাঞ্চলে স্থল অভিযান পুনরায় শুরু করেছে। তাদের দাবি, জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসকে বাধ্য করতেই এই অভিযান।
গত ১৮ই মার্চ থেকে গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় ১,২৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবারের হামলায় তিনটি স্কুল আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার কারণে নিহত হয় অন্তত ১০০ জন।
আইডিএফের ভাষ্যমতে, এসব হামলার লক্ষ্য ছিল হামাসের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রগুলো।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২রা মার্চ হামাসের সঙ্গে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেওয়ার পর প্রায় ২ লক্ষ ৮০ হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ও আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
এর আগে সাহায্য ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে এই মানবিক সংকট আরও বেড়েছে।
এরপর থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফা ও নেজারিম করিডোরে পুনরায় প্রবেশ করেছে। এই করিডোর গাজা শহরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
শুক্রবার আইডিএফ জানায়, তারা গাজা শহরের উত্তরাঞ্চলীয় শহর শুজাইয়াতেও অগ্রসর হচ্ছে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা গাজার বিশাল এলাকাকে নিরাপত্তা অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার এবং রাফা ও খান ইউনিসের মধ্যে নতুন সামরিক করিডোর তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন।
এতে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তাদের স্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুত ও এলাকা দখলের আশঙ্কা বাড়ছে।
এদিকে, হামাসের গত অক্টোবরের আক্রমণের পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বেড়েছে।
হামাসের ওই হামলায় ইসরায়েলে ১,২০০ জন নিহত হয়েছিল, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক। এছাড়া ২৫০ জনকে বন্দী করা হয়।
এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫৯ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়নি।
গাজায় ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় নিহত হয়েছে প্রায় ৫০,৬০০ জন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।
লেবাননে শুক্রবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক হামলায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার হাসান ফারহাতকে হত্যা করেছে।
এই ঘটনা নভেম্বরে হামাস-সংযুক্ত লেবাননের জঙ্গিগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে স্বাক্ষরিত দুর্বল যুদ্ধবিরতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
ইসরায়েলি বাহিনী গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হিজবুল্লাহর স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
এর জবাবে উত্তর ইসরায়েলে রকেট হামলা চালানো হয়, যার দায় স্বীকার করেনি হামাস বা হিজবুল্লাহ।
সিরিয়ার সঙ্গেও ইসরায়েলের উত্তেজনা বাড়ছে।
দেশটিতে ইসরায়েলি বিমান হামলার পাশাপাশি, বৃহস্পতিবার সীমান্তবর্তী দারা এলাকায় স্থল অভিযান চালানো হয়, যেখানে ১৩ জন নিহত হয়েছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সিরিয়ায় অস্থিরতা বাড়ানোর অভিযোগ করেছেন।
ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের এক ফাঁকে তিনি বলেন, “ইসরায়েল আইএসআইএস এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী হুমকির বিরুদ্ধে নতুন রাষ্ট্রগুলোর সক্ষমতা ধ্বংস করছে।”
অন্যদিকে, শুক্রবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পশ্চিমতীর সংলগ্ন হুসান গ্রামের কাছে পাথর নিক্ষেপকারী একদল কিশোর ও যুবকের ওপর গুলি চালালে ১৭ বছর বয়সী ইউসেফ জাওল নামে এক ফিলিস্তিনি নিহত হয়।
তবে, আইডিএফ নিহত যুবকের নাম বা বয়স সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান