লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। নভেম্বরে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরের পর এই প্রথমবার সেখানে আঘাত হানল তারা।
শুক্রবার দিনের শুরুতে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দাহিয়েতে চালানো এই হামলায় একটি ট্রাক ও হিজবুল্লাহর ড্রোন সংরক্ষণের স্থানকে লক্ষ্য করা হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।
বৈরুতের এই হামলার আগে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী শহরটির বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়ার জন্য সতর্ক করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সতর্কবার্তা প্রচারের পর সেখানকার বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছোটাছুটি শুরু করে।
অনেকেই জরুরি ভিত্তিতে তাদের বাড়িঘর ত্যাগ করে। জানা গেছে, হামলার আগে ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র একটি মানচিত্র প্রকাশ করে, যেখানে একটি ভবনকে লাল চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং বাসিন্দাদের ৩০০ মিটারের বেশি দূরে সরে যেতে বলা হয়েছিল।
ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হয়েছে, যখন লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি এখনো বহাল রয়েছে। গত বছরের ২৭ নভেম্বর এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
যদিও এর আগে শুক্রবার সকালে ইসরায়েল জানিয়েছিল, তারা লেবানন থেকে ছোড়া দুটি রকেট প্রতিহত করেছে। এর কয়েক দিন আগে ইসরায়েলের দিকে রকেট ছোড়ার দায় স্বীকার করেনি কোনো পক্ষই।
তবে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “গ্যালিলি শহরে যদি শান্তি বজায় না থাকে, তাহলে বৈরুতেও শান্তি থাকবে না। আমরা ৭ অক্টোবরের আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে দেবো না।”
বিশ্লেষকদের মতে, হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত দাহিয়েতে আঘাত হানা হলে, হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে এর প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
কারণ হিজবুল্লাহ নিজেদের লেবাননের স্বাধীনতা রক্ষাকারী হিসেবে দাবি করে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানী বৈরুতে আঘাত তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
নভেম্বরের যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি। যদিও ইসরায়েল এর মধ্যে লেবাননে কয়েকশ’ বার হামলা চালিয়েছে।
যুদ্ধবিরতির কয়েক দিন পরেই হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের অভ্যন্তরে একটি হামলার দায় স্বীকার করেছিল।
উল্লেখ্য, যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগে, হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের মধ্যে ১৩ মাসের বেশি সময় ধরে চলা লড়াইয়ে ৩,৯০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল এবং প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন, লেবাননের যুদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত হিজবুল্লাহর নয়, বরং সরকারের এখতিয়ারভুক্ত।
নতুন সরকার, যারা যুদ্ধবিরতির পরে নির্বাচিত হয়েছে, তাদের প্রধান অগ্রাধিকার হলো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে নিরস্ত্রীকরণ করা।
তথ্য সূত্র: The Guardian