লেবাননের রাজধানী বৈরুতের একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ভোরে দক্ষিণা বৈরুতের একটি ভবনে এই হামলা চালানো হয়।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, হামলায় তাদের মূল লক্ষ্য ছিল হিজবুল্লাহর একজন সদস্য, যিনি গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনের হামাস গোষ্ঠীকে সহায়তা করছিলেন।
বৈরুতের ‘হায় মাডি’ এলাকার কাছে হওয়া এই হামলায় অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন বলে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির ওপরের তিনটি তলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে পার্ক করা গাড়িগুলো দুমড়েমুচড়ে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঈদের ছুটির (ঈদ-উল-ফিতর) দিন তারা যখন সবাই বাড়িতে ছিলেন, তখনই এই হামলা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন নূর-আল-দীন বলেন, “আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি কি হয়েছে, কিন্তু যখন ধোঁয়া সরে গেল, তখন দেখলাম আমাদের সামনের ভবনটিতে হামলা হয়েছে।”
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের এই হামলা ছিল ‘শিন বেত’-এর (ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা) নির্দেশনায় পরিচালিত।
তাদের দাবি, নিহত হিজবুল্লাহ সদস্য হামাসকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চালানো বিভিন্ন হামলায় সাহায্য করছিলেন। তবে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
গত নভেম্বরে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর থেকে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এর আগে, গত শুক্রবার ইসরায়েলি বাহিনী বৈরুতে হামলা চালায়, যা যুদ্ধবিরতির পর প্রথম ঘটনা ছিল।
লেবাননের হিজবুল্লাহ প্রধান শেখ নাঈম কাসেম সম্প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত থাকলে এবং লেবানন সরকার যদি তা বন্ধ করতে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে হিজবুল্লাহ ভিন্ন পথ বেছে নিতে বাধ্য হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ইসরায়েলি বাহিনীকে জানুয়ারির শেষ নাগাদ লেবাননের সমস্ত ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহার করার কথা ছিল।
একইসঙ্গে হিজবুল্লাহকেও ইসরায়েল সীমান্তের কাছে লিটানি নদীর দক্ষিণ দিক থেকে তাদের সশস্ত্র উপস্থিতি প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছিল।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল নিয়মিতভাবে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালাচ্ছে।
তাদের দাবি, এসব হামলায় হিজবুল্লাহর সদস্য ও অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। যদিও লেবাননের সেনাবাহিনী ধীরে ধীরে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে মোতায়েন হচ্ছে, তবুও তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ইসরায়েলের হামলা বন্ধের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে এবং লেবাননের ভূখণ্ডে এখনো উপস্থিত ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস