শিরোনাম: গাজায় সামরিক কার্যক্রমের জেরে ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত যুক্তরাজ্যের, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কেমন প্রভাব?
যুক্তরাজ্য সরকার গাজায় ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রম এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের প্রতিক্রিয়ায় দেশটির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রসচিব ডেভিড ল্যামি পার্লামেন্টে জানান, গাজায় ‘চরম নীতি’ অনুসরণ করার কারণে ইসরায়েলের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তি আপগ্রেড করার আলোচনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করার দিকে ঝুঁকছে। ইইউ পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কাল্লাস নিশ্চিত করেছেন যে, জোটটি তাদের বাণিজ্য সহযোগিতা চুক্তি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০২২ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাজ্য ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি আধুনিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল, বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তির বাইরে বিশেষ করে পরিষেবা এবং ডিজিটাল বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করা।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিসংখ্যানের একটি বৈশ্বিক ডাটাবেস, ইউনাইটেড নেশনস কমট্রেড (United Nations Comtrade) অনুসারে, ২০২৪ সালে ইসরায়েলের একাদশ বৃহত্তম আমদানি অংশীদার ছিল যুক্তরাজ্য। দেশটি থেকে প্রায় ১.৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধান আমদানি পণ্যের মধ্যে ছিল জেট ইঞ্জিন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং যানবাহন।
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য ছিল ইসরায়েলের অষ্টম বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। ইসরায়েল থেকে যুক্তরাজ্যে ১.৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে।
প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে ছিল হীরা, রাসায়নিক পণ্য, যন্ত্রপাতি এবং ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী।
২০২৪ সালে ইসরায়েলের মোট বাণিজ্যের চিত্র ছিল এমন— দেশটি ৯১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে এবং ৬১.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে।
আমদানি এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে ইসরায়েলের শীর্ষস্থানীয় অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানি এবং আয়ারল্যান্ড। ইসরায়েলের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হলো দেশটির ইলেকট্রনিক্স খাত।
ইন্টেল-এর মতো বড় কোম্পানি, যারা চিপ তৈরির বৃহৎ কারখানা পরিচালনা করে, সেইসঙ্গে সামরিক ইলেকট্রনিক্স এবং উন্নত ম্যানুফ্যাকচারিং-এর জন্য পরিচিত এলবিট সিস্টেমস এবং অরবোটেক-এর মতো সংস্থাগুলো এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
ফার্মাসিউটিক্যালস উৎপাদনেও ইসরায়েল একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি তেভা ফার্মাসিউটিক্যালস-এর মতো সংস্থাগুলো এখানে সক্রিয়।
এছাড়া, হীরা বাণিজ্যেও ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে। দেশটি বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত হীরা আমদানি করে, যা প্রক্রিয়াকরণের পর রপ্তানি করা হয়।
২০২৪ সালে ইসরায়েল ৬১.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য বিক্রি করেছে। ইসরায়েলি পণ্যের বৃহত্তম আমদানিকারক দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র (১৭.৩ বিলিয়ন ডলার), আয়ারল্যান্ড (৩.২ বিলিয়ন ডলার) এবং চীন (২.৮ বিলিয়ন ডলার)।
চীনের একটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল, হংকং, ইসরায়েল থেকে অতিরিক্ত ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। এই হিসাব যোগ করলে চীন ইসরায়েলি পণ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিকারকে পরিণত হয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে, যুক্তরাজ্য এবং ইইউ-এর এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গতিপথে পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব কেমন হবে, তা সময়ই বলবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা